পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা ; পরাধীনতা \లిgV) পারে, কিন্তু উভয়ের মধ্যেই নিদারুণ বিদ্বেষ ও ঈর্ষার অস্তিত্বের ঐতিহাসিক প্রমাণ বৰ্ত্তমান নাই । - বিদ্বেষ ও ঈর্ষার অস্তিত্ব স্বীকার করিয়া লইলেও মূল বিচারে কিছু আসে যায় না। ব্রাহ্মণও ভারতবর্ষের সর্বত্রব্যাপী, শূদ্রও ভারতবর্ষেব সৰ্ব্বত্রব্যাপী ; উভয়ে কিছু স্বতন্ত্র ভাবে ভিন্ন ভিন্ন ভূখণ্ড অধিকার করিয়া বাস করে না। কোন রাষ্ট্রীয় বিপ্লব উপস্থিত হইলে উভয়েtাই লাভ বা উভয়েরই ক্ষতি সম্ভব। কাজেই দেখা যাইতেছে, ইউরোপে একটা যাহা বিদ্যমান আছে, ভারতবর্ষে তাহা নাই। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ড রাজ্য উভয়েই বর্তমান, কিন্তু ইউরোপে যেমন ফরাসী জাৰ্ম্মান পরস্পর বিরোধী, পরস্পর প্রতিকূল, দৃঢ়বদ্ধ, সুগঠিত জাতিব স্বষ্টি হইয়াছে, ভারতবর্ষে সেই অর্থে তেমন ভিন্ন ভিন্ন বিরোধী জাতির বা সম্প্রদাযের সৃষ্টি হয় নাই । ভারতবর্ষের যে কিছু বর্ণগত বা ধৰ্ম্মগত বা সম্প্রদায়গত বিরোধ আছে, তাহ রাজনৈতিক বিরোধ নহে, তাহ সামাজিক বিরোধ ; তাহা প্রত্যেক প্রদেশের, প্রত্যেক ভূখণ্ডেব অভ্যস্তুরেই বর্তমান । •াহ জমাট বাধিয়া এক একটা নিৰ্দ্দিষ্ট সীমাবিশিষ্ট ভূখণ্ড অধিকৃত করিয়া রাখে নাই। ফলে ভারতবর্ষে রাজায় রাজায় যুদ্ধ হইয়াছে, রাজবংশে রাজবংশে বহু দিন ধরিয়। বিবাদ চলিয়াছে, কিন্তু জাতিতে জাতিতে, সমাজে সমাজে মৰ্ম্মঘাতী যুদ্ধ কখনও ঘটিয়াছে বলিয়া বোধ হয় না। এক প্রদেশের লোক দল বাধিয়া অন্য প্রদেশের লোকের উপর রাজনৈতিক প্রভূত্ব স্থাপনে উদ্যত হইয়াছিল, তাহা বোধ হয় না । তামাব বিবেচনায় ভারতবাসী প্রজার এই প্রকৃতিগত অসম্পূর্ণতাই তাহার পরাধীনতাব প্রকৃত কাবণ। ভারতবাসী পরাধীন ; কেন না, বাহিরের শত্রু আসিয়া স্বদেশ আক্রমণ করিলে তাহাতে যে আপত্তি করিতে হয়, সে তাহা জানে না ; রাজলোকে কোন অঘটন ঘটনা হইলে তাহাতে যে হস্তক্ষেপ করতে হয়, তাহা তাহার মনের মধ্যে স্থান পায় না। ইংরাজীতে যাহাকে প্যাটুরিয়টিজম বলে, সে ভাবট। তাহার মনে কখনও অঙ্কুরিত হয় নাই। ভারতবর্ষে কখনও জাতীয়তাব বিকাশ হয় নাই। কেন হয় নাই, তাতা আলোচ্য বিষয় ; এবং দৃষ্ট ব্রাহ্মণের ঘাডে সমস্ত নিক্ষেপ করিলেও যে উত্তরটা সম্যকৃ হইল, তাহা বিবেচনা করিতে পারি না । মনে করিও না যে, ভারতবাসীর প্রাণের ভয় অন্যের অপেক্ষা বেশী বা ভারতবাসী সাহস বিষয়ে অন্যের অপেক্ষা হীন । এ কথা যে বলিবে, সে ভারতের ইতিহাস অধ্যয়ন করে নাই । জাতীয় ভাব কেন যে এদেশে বিস্তার লাভ করে নাই, তাহার একটু অনুসন্ধান দরকার। সমুদায় হিন্দু জাতি কেন যে একটা মহাজাতিতে পরিণত হয় নাই, তাহা বুঝিয়া দেখা আবশুক । , এক রাজার অধীনতা জাতীয় ভাবের বিকাশে সহায়তা করে। রাজনৈতিক বন্ধনের মত বন্ধন খুব কম আছে। আজকাল এ দেশে যে একটু স্বর ফিরিবার রকম দেখা যাইতেছে, যেন জাতীয় ভাবের অতি সামান্য একটু বিকাশ হইতেছে বলিয়া কখন সন্দেহ জন্মিতেছে, এক দোর্দণ্ড-প্রতাপ রাজছত্রের অধীনতা তাহার কারণ, কিন্তু ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাসে এ ঘটনা বোধ হয় কখনই ঘটে নাই। চন্দ্রগুপ্ত,