পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*88 রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র অশোক, সমুদ্রগুপ্ত, বিক্রমাদিত্য প্রভৃতি নরপতি এক একবার বিস্তৃত সাম্রাজ্য স্থাপনে সমর্থ হইয়াছিলেন বলিয়া শোনা যায়, কিন্তু তাহাদের মধ্যে কাহারও সাম্রাজ্য বোধ হয় অধিক দিন স্থায়িত্ব লাভ করে নাই। সমগ্র ভারতকে বহু দিন ধরিয়া একছত্র করিয়া রাখিতে কোনও রাজবংশই বোধ হয় সমর্থ হন নাই। তৎপূৰ্ব্বে সমগ্রদেশ অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বস্বপ্রধান রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এই ব্যাপারটা জাতীয় ভাবের অবিকাশের একটা কারণ বলিয়া গণ্য হইতে পারে। আরও কয়েকটা কথা আছে। ভারতবর্ষ অতি বৃহৎ দেশ। ইহার ভিতর নানা জাতীয় নানা বর্ণের লোক বাস করে। প্রথমেই ত আৰ্য্য ও অনাৰ্য্য ও তদুভয়ের মিশ্রণে উৎপন্ন বিবিধ সঙ্কর বর্ণ। আবার লুনার্য্যগণের মধ্যে ছত্রিশ কোটি শাখা । এই বর্ণভেদ ও জাতিভেদের সহিত আবার ভাষাগত ভেদ । আর্য্যভাষা অনার্য্যভাষাকে একবারে লুপ্ত করিতে পারে নাই। দক্ষিণাপথের অধিকাংশ হিন্দুধৰ্ম্মাবলম্বী লোকেও অনার্য্যভাষায় কথা কহে । সেই ভাষার মধ্যেও আবার তামিল তেলুগু প্রভৃতি নানা ভাষা। আরণ্য ও পাৰ্ব্বত্য অনাৰ্য্যদিগের সহস্র ভাষার কথা ছাড়িয় দাও । এক আর্য্যভাষাই আবার প্রদেশভেদে কত রূপ গ্রহণ করিয়াছে। পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, বাঙ্গলা—এক প্রদেশের লোকে অন্য প্রদেশের ভাষা বুঝেন না । ভাষাগত ঐক্য না থাকিলে সামাজিক বন্ধন কোনও কাজের হয় না। সমগ্র ভারতবর্ষকে এক দেশ বলাই কঠিন। বরং সমগ্র ইউরোপকে এক দেশ বলা যাইতে পারে, সমস্ত ইউরোপীয়কে এক জাতিভুক্ত বল। যাইতে পারে, কিন্তু ভারতবর্ষকে একটা দেশ ও সমস্ত ভারতবাসীকে এক জাতিভুক্ত বলিতে যাওয়া একরকম বিড়ম্বন। বন্ধনের মধ্যে কেবল একটা বন্ধন ছিল । বন্য ও পাৰ্ব্বত্যগণকে ছাড়িয়া দিলে প্রায় সমস্ত ভারতবাসী এক ধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়াছিল।. আৰ্য্য জাতির বেদমূলক পন্থায় প্রায় সকলেই চলিতে শিখিয়ছিল ও বেদমূলক আচার গ্রহণ করিতে অভ্যস্ত হইয়াছিল। কিন্তু ইহার মধ্যেও বিভিন্ন সম্প্রদায় ভেদ, বিবিধ আচারভেদ ঘটিয়া সমস্ত জাতিকে কখনও জমাট বাধিতে দেয় নাই। জাতীয়তার অভাব বুঝাইবার জন্য এইরূপ কতকগুলা কথা বলা যাইতে পারে ; এবং সচরাচর এইরূপ কারণই অনেকে নির্দেশ করিয়া থাকেন। সব গুল জড়াইলে একটা কথায় দাড়ায়। ভারতবাসী এক জাতিতে পরিণত হয় নাই ; কেন না, ভারতবর্ষ দেশটা অতি প্রকাণ্ড । ইহা একটা দেশ নহে, একটা মহাদেশ। ইহ। এক জাতির আবাসভূমি নহে, এক বর্ণের লোক ইহাতে বাস করে না। ইহা নানা জাতি ও নানা বর্ণের ময়ূন্যের বিহারক্ষেত্র। ইহাতে নানা ভাষা, নানা আচার, নানা ধৰ্ম্ম । রাজনৈতিক বা সামাজিক, ধৰ্ম্মগত বা ভাষাগত বা আচারগত, কোন একটা সাধারণ সম্বন্ধ এই বিংশ কোটি যদুকুলকে একটা বাধনে আবদ্ধ রাখে নাই। এই সাধারণ বন্ধনের অভাবে ব্যক্তির প্রতি ব্যক্তির এমন আকর্ষণ ঘটিতে পায় নাই, যাহাতে উভয়ে একত্র হইয়। সাধারণ উদ্দেশ্যে আপনার জীবনের গতি পরিচালিত করিতে পারে। কিন্তু এই পৰ্য্যন্ত বলিলেই কি মনের তৃপ্তি হয় ? ভারতবর্ষ ভিন্ন অন্যত্র দৃষ্টিপাত করিলে কি দেখা যায় ? অন্যত্রও কি ঠিক এই সকল কারণ বর্তমান থাকিলেও