পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষা প্রণালী পঞ্চাশ বৎসব পূৰ্ব্বে মীমাংস হইয়াছিল, ইংরাজী না পডিলে আমাদের কোন উন্নতি হইবে না, যেহেতু সংস্কৃত ভাষায় লিখিত তালপত্রের গ্রন্থগুলিতে কেবল ক্ষীরসমুদ্রের ও দধিসমূদ্রের বর্ণনা আছে । আজকাল সাব্যস্ত হইতে বসিয়াছে, ইংরাজী পডিয়া ত বিশেষ কিছু ফল হইল না। পঞ্চাশ বৎসবের পরিশ্রম ও অর্থব্যয় পণ্ড হইল দেখিয়া দেশের মধ্যে একটা হাহুতাশ ও কলবব উপস্থিত হষ্টয়াছে ও চারি দিকেই তাহার প্রতিধ্বনি শুনা যাইতেছে। বৎসর দুই পূৰ্ব্বে এশিয়াটিক সোসাইটিৰ সভাপতি বাযিক অধিবেশনের বক্তৃতাকালে সোসাইটির জন্মকাল হইতে আজ পর্য্যন্ত সোসাইটিব সম্পাদিত পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধগুলিব লেখকের তালিকা দেখাইয়া বলিয়াছিলেন, দেখ, তালিকামধ্যে বাঙ্গালীর নাম কেমন বিবল , এত কাল ইংরাজি শিথিয়াও একটা সুচারু বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ ইহাদেব মস্তিক হইতে বাহির হইল না , বাঙ্গালীর কোন আশাই নাই। তাহাদের মাথাই নাই। দুভাগ্য বাঙ্গালী জাতিব প্রতি দয়া বিতরণে বিধাতা তেমন মুক্তহস্ত নহেন, তথাপি কেমন কবিয়া এই নিদাৰুণ বাক্যবাণ র্তাহার নিকট পৌঁছিয়া তাহার হৃদয়কে একটু যেন করুণ করিয়াছিল বলিয়া বোধ হয়। কেন না, উক্ত অধিবেশনের পর এক বৎসর পার না হইতেই ডাক্তাব জগদীশচন্দ্র বসুর কার্য্যকলাপ বাঙ্গালীর মলিন মুখকে সহসা জ্যোতিৰ্ম্ময় করিয়া দিয়াছে । বস্ন মহাশয়ের আবিষ্কৃত ক্ষুদ্র যন্ত্রটি বনমানুষের হাড়ের বিনা প্রয়োগে আদেশ মাত্রে আকাশতরঙ্গ ঘটিত যে সকল নিগৃঢ় কথা বলিয়া ফেলে, তাহ সাধারণ বাঙ্গালীর নিকট দুর্ভেদ্য রহস্য মাত্র, কিন্তু তিনি যে তাহার শুষ্ক মুখে হাস্ত সঞ্চার করিয়াছেন, তজ্জন্য সে র্তাহার নিকট চিরকাল ঋণী থাকিবেক । যাহাই হউক, বাঙ্গালীর মস্তিকের অমুর্বরতা সম্বন্ধে আজকাল তত লম্বা কথা শুনিতে পাওয়া যায় না, তথাপি কর্ষণ সত্ত্বেও ফল প্রসব হইতেছে না কেন, তাহা চিন্তনীয় বিষয় । সে দিন বিজ্ঞান-সভায় বঙ্গেব মহামান্য শাসনকৰ্ত্ত বলিয়াছেন, বাঙ্গালীর নিরাশ হইবার তেমন কারণ নাই, তবে কর্ষণের পদ্ধতি-দোষে এ রকম ফলাভাব । সুচারুরূপে অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে কৰ্ষিত হইলেই ক্ষেত্রে শস্ত জন্মিবে এবং কৃষ্ণ কাকের জ্ঞানচক্ষুর উন্মেষ ঘটলেই সে গৃধ্ৰুরাজের সহিত আপনার পার্থক্য বুঝিতে পারিয়া তাহার কর্কশ কলরবে বিরাম দিবে। সেই পদ্ধতিটা কি ? বক্তার মতে আমাদের প্রচলিত শিক্ষাপ্রণালীটা ঠিক নহে। অর্থাৎ ভারত গবৰ্ণমেণ্টের স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গীয় গবর্ণমেণ্টের শিক্ষা লাভ ষে প্রণালীতে বাঙ্গালী সন্তানকে মানুষ করিতেছেন, তাহাতে সে মানুষ না হইয়া কাক হইতেছে। ছাত্রের পাঠশালীয় প্রবেশ করিয়া অবধি কেবল শব্দতত্ত্ব ও সাহিত্যতত্ব অভ্যাস করে, সেই জন্য তাহাদের কেবল শব্দীলঙ্কারে ও বাকা লঙ্কারে আপনাকে অলঙ্কৃত কল্পিরায় শক্তি জন্মে। কখনও হাতে কলমে কাজ শিখে না, বিশেষতঃ বিজ্ঞান শাস্ত্র নামে