পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : শিক্ষাপ্রণালী Woot X ষে একটা শাস্ত্রকে সকলেই নিন্দ কবে, অথবা যাহার সাহায্য না লইলে এক পা চলিতে পারে না, সেই শাস্ত্রের একবারে আলোচনা নাই বলিলেই হয় । অথচ অন্য পক্ষে মিলের ও বার্কের রচনা হইতে কতকগুল বচন সংগ্ৰহ করিয়া তাহার বাবদূকতা বৃদ্ধি পায়। কোন ক্ষেত্রে কিরূপে তাহার প্রয়োগ করিতে হইবে, সে জ্ঞানই তাহার জন্মে না। অস্ত্র বড় উপকারী পদার্থ, কিন্তু যে অস্বের ব্যবহারে অনভিজ্ঞ ও প্রয়োগে অপটু, তাহার পক্ষে তাহা কেবল ভারস্বরূপ । কথাটা সম্পূর্ণ সত্য বলিয়া গ্রহণ করিতে আমরা প্রস্তুত আছি ; বিজ্ঞান শিক্ষার উপকারিত সম্বন্ধে অন্যের কোন সন্দেহ থাকিলেও আমাদের কিছু মাত্র ও সংশয় নাই এবং বিজ্ঞান-শিক্ষার প্রসাদে আমাদের কার্য্যকারণতত্ত্বজ্ঞান ও তাহার সহিত কাণ্ডজ্ঞান বৃদ্ধি পাইবে, তাহাও আমরা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি ; আর হাতে কলমে শিক্ষা, যাহাকে ইংরাজিতে টেকৃনিক্যাল শিক্ষা বলে, তাহার অভাবে প্রয়োগাভিজ্ঞতা জন্মে না, তাহাও স্বীকার করি । তথাপি একট, কিন্তু আছে, তাহার উত্থাপনের পূৰ্ব্বে আর কে কি বলেন, তাহা একবার দেখিয়া লওয়া যাক । অনেকের মত এই ষে, আমাদের বিদ্যালয়ে ধৰ্ম্মহীন ও নীতিহীন শিক্ষা দেওয়া হয়, সেই জন্য আমাদের চরিত্র ভাল জমাট বাঁধতেছে না ; এবং চরিত্রের সারবত্ত না থাকিলে কোন শিক্ষাতেই কোন ফল লাভের সম্ভাবনা নাই । ধৰ্ম্মহীনতা ও নীতিজ্ঞানের অভাবে আমরা জীবনের উদেশ্ব ও দায়িত্ব বুঝিতে পারি না আমরা সংসারে থাকি। অথচ সংসারের সহিত আমাদের সম্বন্ধ বুঝি না। আমরা উপরে ভাসি, তলে মগ্ন হইতে পারি না । যত দিন ধৰ্ম্মহীন ও নীতিহীন শিক্ষণ বর্তমান থাকিবে, তত দিন আমরা সংসার-সলিলে ভাসিতেই থাকিব। এ কথাটাও আমরা সত্য বলিয়। স্বীকার করি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, র্যাহার। এই বিষয়ে কথা তুলেন, তাহারা মীমাংসার পথ দেখান না। যাহাদের উপর শিক্ষার বন্দোবস্তের ভার আছে, তাহারাও ইহা স্বীকার করেন, কিন্তু কৰ্ত্তব্য বিচারের সময় কেমন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়েন। গবর্ণমেণ্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় বলেন, ভারতবর্ষের হিন্দু-মুসলমান-খ্ৰীষ্টান-জড়িত সমাজে আমরা কিরূপে ধৰ্ম্ম-শিক্ষার ব্যবস্থা করিতে পারি ; বিশেষতঃ যখন আমরা এ বিষয়ে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করিব না, এই প্রতিশ্রুতি করিয়া বসিয়া আছি। তবে ধৰ্ম্ম অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক ধৰ্ম্ম ত্যাগ করিয়াও নীতির উপদেশ চলিতে পারে ; তাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় স্থির করিয়া দিয়াছেন যে, প্রবেশিকার সাহিত্য-পুস্তকের এত পাতার মধ্যে এত পাতার কম যেন নীতিকথা না থাকে। নীতিশিক্ষার এমন রাজকীয় পন্থা আবিষ্কার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভিন্ন অন্যের কত্ত্বক অসাধ্য। কোন কোন বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষেরা আরও কিছু বিশেষ ব্যবস্থা করিয়া থাকেন। মিশনারী সাহেবের ছাত্রদিগকে ভয় দেখান, বাইবেল-ক্লাসে উপস্থিত না থাকিলে পরীক্ষা দিতে দিব না। অপিচ আৰ্য্য-বিদ্যার আকরগুলিতে আজকাল গীতা পাঠের ও চাণক্যশ্লোক আবৃত্তির ব্যবস্থা হইতেছে। এমন কি, গবর্ণমেণ্টের আহুকূল্যে স্থাপিত “উচ্চতর শিক্ষাসমাজ” আপনার নাম গোপন করিয়াও মাঝে মাঝে নৈতিক লেকৃচারের বন্দোবস্ত করিয়া থাকেন, শুনিয়াছি। আশা করা যায়, গবর্ণমেণ্ট আগামী দশম বাধিক সেন্সাস লইবার সময় এই সকল উপায়ে নীতিশিক্ষা