পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

wEOR রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রাপ্ত বালকগণের সংখ্যা লইবার একটা ঘর রাথিয়া দিবেন ও বর্ষে বর্ষে এই সকল উপায়ে বাঙ্গালী যুবকের নীতির কি হারে উন্নতি হইতেছে, তাহার একটা করিয়৷ রিপোর্ট দিবেন। আর এক সম্প্রদায় আরও একটু মূলে হাত দেন। তাহারা বলেন, শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে কেবল মানসিক ব্যায়ামে লিপ্ত থাকিয় বাঙ্গালী-সস্তানের মাথা নষ্ট হইয়া যাইতেছে। এ কথাটা ঠিক । রুগ্ন দেহে স্বস্থ চিত্তের অবস্থিতি বিজ্ঞানবিরুদ্ধ ; এবং যথোচিত দৈহিক ব্যায়ামে শারীরিক বলের পুষ্টিলাভের সঙ্গে মানসিক বলও যে বৃদ্ধি পায়, কোন ব্যক্তি তাহা অস্বীকার করিবে ? এই জন্য কিছু দিন পূৰ্ব্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রস্তাব হইয়াছিল, যাহার। বৎসরের মধ্যে এতদিন কুস্তিশালীয় উপস্থিত না থাকিবে, তাহাদিগকে যেন পরীক্ষা দিতে ন দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সঙ্গে মানসিক ব্যায়ামের মাত্রাট। কিছু কমাইবার এবং দরিদ্র অন্নহীন বালকের শারীরিক ব্যায়ামে অত্যন্ত আবশ্বক শরীর পোষণের উপাদান সংগ্রহের কোন প্রস্তাব হইয়াছিল কি না, ঠিক জানি না । এইরূপে নানারূপ কারণ নির্দেশিত হইয়াছে ও হইতেছে। কেহ বলেন, পাঠ্য বিষয়ের সংখ্যা বেশী ; কেহ বলেন, পাঠ্য পুস্তকের পাতা বেশী ; কেহ বলেন, ছেলেরা না বুঝিয়া কেবল মুখস্থ করে ; কেহ বলেন, পুস্তক মুখস্থ না করিয়া তাহার কী অর্থাৎ অর্থ-পুস্তক মুখস্ত করে ; অনেকে বলেন, সেই কী? আবার ভুলে পূর্ণ। সম্প্রতি একখানি প্রসিদ্ধ সাপ্তাহিক কাগজ কয়েক মাস ধরিয়া প্রমাণের চেষ্টা করিতেছেন যে, বাঙ্গালী লিখিতে গেলেই ইংরাজী ভুলে, সেই জন্য এত দুরবস্থা। কেহ বা একবারে নির্ঘাত বলিয় ফেলেন, ইংরাজী শিক্ষাটাই কিছুই নয় ; স্কুলগুলি তুলিয়া দিয়া টোল বসাও । আমরা নিরীহ ভাবে এই সকল কথারই সারবত্ত মানিয়া লইতেছি ; কিন্তু প্রত্যেকটাতেই আমাদের সেই প্রাচীন কিন্তু রহিয়াছে। ইংরাজী শিক্ষা উঠাইয়া দিলে যে শিক্ষা চলিতে পারে না, তাহা আমরা বিশ্বাস করি না, কিন্তু তাহা ঘটিবে কি ? ভুল না লিখিয়া শুদ্ধ ইংরাজী লিখিলে ভাল হয়, কিন্তু কোন আছিল৷ অনুসারে ভ্রাস্ত লেখকের শাস্তি বিধান করিব ? শারীরিক পরিশ্রম আবশ্যক, কিন্তু ফ্যামিন ফণ্ডের তহবিলেও আর এত মৌজুদ নাই যে, তাহার সাহায্যে ফুটবল ক্রীড়ার্থীর আহারের ব্যবস্থা করা যাইবে। ধৰ্ম্মশিক্ষা ত ভাল, কিন্তু ইণ্ডিয়ান মিরারের সার্টিফিকেট সত্ত্বেও সকলে গীতার অর্জুনকৃত ভগবৎস্তোত্রকেও অসাম্প্রদায়িক বলিয়া স্বীকার করিবে না। বিজ্ঞান শিক্ষা ত অতি উত্তম পদার্থ, কিন্তু ষে শেক্ষপীয়র বা বার্ক মুখস্থ করিয়াছে, তাহার মুখে দুইটা মিষ্ট বাক্যের আশা করা যায়, কিন্তু যে কেবল ডেশানেলের বিজ্ঞানগ্রন্থ মুখস্থ করিয়াছে, তাহার নিকট সে আশাও নাই। সকলেই সকল কথা বলেন, কিন্তু একটা সোজা কথা কেহই বলেন না, অথবা মুখে বলিলেও সেই বাক্যের ন্যায়সঙ্গত তাৎপৰ্য্য বুঝিয়া দেখেন না। সেই সোজ। কথাটা এই মে, শিক্ষা কোথায় যে বাঙ্গালীসস্তান শিক্ষালাভ করিবে ? উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বৰ্ত্তমান ; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা দেন না, কেবল পরীক্ষা করেন ; এবং সেই পরীক্ষার পদ্ধতি আবার এমন যে, যে শিখিতে ব্যস্ত, তার পরীক্ষায় উদ্ধারের আশ}