পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাষ্ট্র ও নেশন বিংশ শতাব্দীতে যুগধৰ্ম্ম—রাষ্ট্র ও নেশন, এই দুই ঐতিহাসিক পদার্থ অবলম্বনে প্রতিষ্ঠিত হইবে, ইহাই পণ্ডিতগণের বিশ্বাস । বঙ্গদর্শন নবজীবন লাভ করিয়াই এই যুগধৰ্ম্মের ব্যাখ্যায় প্রবৃত্ত হইয়াছেন, ইহা বঙ্গদর্শনের অতীত জীবনের সহিত অসঙ্গত নহে। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের ভারতবর্ষে এই দুইটি পদার্থেরই কোন কালে অস্তিত্ব ছিল না। সাহাবুদিন ঘোবিকে যদি ভারতবর্ষব্যাপী মহারাষ্ট্রের সম্মুখীন হইতে হইত, তাহা হইলে ভারতবর্ষের পরবর্তী ইতিহাস অন্য অকার ধারণ করিত। এবং ভারতবর্ষে নেশন থাকিলে পৃথিবীর ইতিহাসও কিরূপে পরিবত্তিত হইতে পারিত, তাহা বলা যায় না । 疆 অধ্যাপক সীলী বলিয়াছেন যে, ভারতবর্ষে নেশন নাই; কিন্তু এমন বীজ হয়ত আছে, যাহা হইতে কালে নেশন অঙ্কুরিত হইয়া বদ্ধিত হইতে পারে। এই কারণে রাষ্ট্র কাহাকে বলে ও নেশন কাহাকে বলে, তাহ ভারতবাসীর পক্ষে বুঝিয় উঠা কঠিন । কিন্তু বুঝ নিতান্ত আবশ্বক হইয়া পড়িয়াছে। নেশনের লক্ষণ সম্বন্ধে রেনার মত বঙ্গদর্শনে সঙ্কলিত হইয়াছে। যিনি অবহিত ভাবে উহ! পাঠ করিবেন, তিনিই বুঝিবেন, এক কথায় নেশনের সংজ্ঞা দেওয়া চলে না। রাষ্ট্র আশ্রয় করিয়া নেশন উৎপন্ন হয় ; কিন্তু রাষ্ট্র মাত্রেই নেশন জন্মে না। ইউরোপ খণ্ডে রুষিয়া প্রবলপ্রতাপ রাষ্ট্র ; কিন্তু রুষীয় জাতিকে নেশন বলা যায় কিনা সন্দেহ। নেশন বলা যায় না ; কেন না, রুষিয়া নামে মহারাষ্ট্রের একমাত্র নিয়ন্ত্রী সৰ্ব্বতোমুখী রাজশক্তি। এই রাজশক্তি একবারে মুখাপেক্ষা করে না। প্রজাশক্তি স্বেচ্ছাপ্রবৃত্ত হইয়া, রাজশক্তিকে সমর্থন করে না। যেখানে রাজশক্তিতে প্রজাশক্তিতে এরূপ বিচ্ছেদ নাই, সেইখানেই নেশন মূৰ্ত্তিমন্ত অবস্থায় দণ্ডায়মান। ইউরোপে ব্রিটিশ, ফরাসী ও জাৰ্ম্মান এবং আমেরিকায় মিলিত রাষ্ট্রের প্রজাগণ নেশনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু ইউরোপের ইতিহাস আলোচনা করিলে দেখা যায় যে, বহু দিন পূর্বে সেখানেও নেশনের অস্তিত্ব ছিল না । তবে ইউরোপের সমাজক্ষেত্রে বহু দিন পূৰ্ব্বে এমন বীজ উপ্ত হইয়াছিল, যাহা হইতে বিবিধ নেশন, অঙ্কুরিত ও প্রবৃদ্ধ হইয়াছে । ইতালীয় নেশন ও জার্মান নেশন প্রকৃতপক্ষে বিগত উনবিংশ শতাব্দীর সর্বপ্রধান ঐতিহাসিক হাষ্ট্র। সংক্ষেপে নেশনের লক্ষণবিবৃতি চলে না ; যদি নিতান্তই সংক্ষেপে বলিতে হয়, তাহা হইলে নেশন অর্থে আমরা সুগঠিত, সংহত, শরীরবদ্ধ মানবসমাজ বুঝিব। ঐ সমাজ শরীর সর্বদা জাগ্রত ও সচেতন থাকিয় আপনার স্বাৰ্থ অর্থাং সাধারণ স্বাধ, রক্ষার জন্য সচেষ্ট , শক্র হইতে আত্মরক্ষণে ও পরের বিরুদ্ধে