পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : সামাজিক ব্যাধি ও তাহার প্রতিকার לא לסא যাইতেছ ; পূর্বে পাল-তোলা জাহাজের আমলে যাহা দশ বৎসরে লইয়া যাইতে, এখন রেল তার ষ্টীমারের আমলে তাহ দশ দিনে লইয়া যাইতেছে ও তাহার বিনিময়ে কতগুলা কাচ আর লোহা আর মাটি দিয়া আমাদিগকে প্রতারিত করিতেছ। এখন তোমাদের অবাধ বাণিজ্যেব কল্যাণে টাকায় আট মণ চালেব কথা আমাদের উপন্যাস হইতে চলিয়াছে ; বাক্সে রৌপ্যমুদ্রা ও হাল আইনমতে স্বর্ণমুদ্রা সঞ্চিত থাকিলেও আমাদের অন্নাভাবে প্রাণবিয়োগ ঘটবে। প্রতিপক্ষ মহাশয় তখন দশনপ্রভায় শ্মশ্রগহন মুখমণ্ডলের ধ্বাস্তরাশি বিদূরিত করিয়৷ বলিতে থাকেন,—ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করি, টাকায় আট মণ চাল যেন তোমাদের পক্ষে উপন্যাসই থাকে। টাকায আট মণ চাল, কি ভীষণ কথা । এই কৃষিপ্রধান দেশের অধিকাংশ লোক কৃষিবৃত্তি দ্বারা জীবিকা নিৰ্বাহ করে। এমন এক কাল ছিল, যখন সে তাহার সংবৎসরের পরিশ্রমের ফুল শস্য, যাহা দস্ল্যর হস্ত হইতে ও দক্ষ্য হইতেও ভয়ানক জমিদার ও র্তাহার পারিপাত্বিকগণের হস্ত হইতে রক্ষা করিয়৷ আপনার ও আপনার পরিজনবর্গেব দেহরক্ষার জন্য সঞ্চিত করিতে সমর্থ হইত, তাহার বিনিময়ে সে কি পাইত ? না, আট মণের বিনিময়ে এক খণ্ড রজতমুদ্র । এইরূপ বিনিময় ব্যাপারের পর তাহার অন্যান্য দৈহিক প্রয়োজন নির্ববাহ একরূপ অসাধ্য সাধন- হয়ত তাহার শীতনিবারণ ও লজ্জানিবারণও ঘটত না । হয়ত ক্রেতার অভাবে তাহার ক্ষেতের ফসল মূষিকের উদরে যাইত বা ক্ষেতে পচিত , তাহার রাজকরের সংস্থানও ঘটিয়া উঠিত না । আমাদের অনুগ্রহে ও স্বাধীন বাণিজ্যের অনুগ্রহে সে আর তাহার পরিশ্রমলব্ধ জীবনোপায় শস্যসম্পত্তি মূষিকের ও তস্করের ও নায়েব গোমস্তার উদর পূরণের জন্য গোলা বাধিয়া রাখে না ; এখন নিজে উদর পুরিয়া খাইয়া যাহা অবশিষ্ট থাকে, তাহার বিনিময়ে নানাবিধ প্রয়োজনীয় সামগ্রী, হয়ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিলাসোপকরণ পৰ্য্যন্ত, সামান্য মূল্যে আমাদের নিকট গ্রহণ করে ও জীবনে আরাম ও স্বাস্থ্য উপভোগ করিবার অবসর পায়। একালে চাষার ছেলে ছাতা মাথায় দেয়, জামা গায় দেয়, জুতা পরে , চাষার গৃহিণী সোনায় রূপায় আপনার শু্যাম তনু অলঙ্কত করে ; কুযক গৃহস্থ এখন পোষ্ট অফিস হইতে কুইনাইন খরিদ করে, এবং হয়ত শৌণ্ডিকালয়েও এক আধ বার লব্ধপ্রবেশ হইয়া দিনান্তের পরিশ্রমজাত অবসাদ দূর করিবার অবকাশ পায়। সেকালের ধনী লোকে আইন-ই-আকবরীর ব্যবস্থামত বাদশাহী পোলাও চারি আনা খরচে প্রস্তুত করিত ; কিন্তু তাই বলিয়া মনে করিও না ষে, সেকালের কৃষকেরও ভাগ্যে শাকান্ন ভিন্ন অন্য সামগ্ৰী জুটিত। সেকালে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে তাজমহল নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল ; কিন্তু তাই বলিয়। মনে করিও না, সেকালে মজুররমণীরা মুক্ত৷ পোড়াইয়া পান সাজিত। দেশের মধ্যে পলান্নভোজী কয় জন ? আর শাকান্নভোজীই বা কয় জন ? পলান্ন ভোজনের খরচটা এখন হয়ত বাড়িয়াছে, কিন্তু শাকান্নভোজীর আরাম কমিয়াছে মনে করিবার কোন কারণ নাই। তোমাদের দেশে যে এই ঘন ঘন দুভিক্ষ ঘটতেছে, তাহার জন্ত অবাধ বাণিজ্যকে স্বায়া করিও না। প্রত্যুত দুভিক্ষের জন্য ভারতবর্ষের ল্যাটিচুড বা অক্ষাংশ যতটা স্বায়ী, আমরা ততটা দায়ী নহি । দুভিক্ষ সেকালেও ছিল ; হয়ত আরও বেশী বেশী