পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শব্দকথা ঃ ধ্বনি-বিচার אלא কর্ণগোচর হয় না। আপাততঃ ঐ সকল ধ্বস্তাত্মক ও ধ্বনিজত শব্দের কোনই সার্থকতা দেখা যায় না, অথচ উহারা কিরূপ আশ্চৰ্য্যভাবে অর্থ ব্যঞ্জন করে! ক ন ক নে শীত বলিলে যেমন শীতের তীব্রত বুঝায়, চ কৃ চ কে দুয়ানি বলিলে যেমন জুয়ানির ঔজ্জ্বল্য বুঝায়, রাঙা-টু কৃ টু কে বলিলে সেই রাঙার তীক্ষত যেমন চোখের উপব ঠিকরিয়া পডে, আর কোন বিশেষণ তেমন স্পষ্টভাবে সেই সেই অর্থ প্রকাশ করিতে পারে না। চ কৃ চ কে শব্দটির অন্তর্গত তালব্যবৰ্ণ ‘চ’ আর কণ্ঠ্যবর্ণ ‘ক’, এই দুই বর্ণের ধ্বনিতে এমন কি আছে, যাহতে চ কৃ চ কে জিনিসের চ ক চি ক্য বা উজ্জলতা বুঝাইয়া দেয় ? উজ্জল জিনিস হইতে যদি বস্তুতই কোনরূপে চ ক চ ক ধ্বনি বাহির হইবার সম্ভাবনা থাকিত, তাহা হইলে ঔজ্জলোব সহিত চাকচিক্যের সম্পর্ক বুঝিতাম। কিন্তু সেরূপ ত কিছুই শুনি না। ঔজ্জ্বল্য দর্শনেন্দ্রিয়েব বিষয়, আর চকুচকানি শ্রবণেন্ত্রিয়েব বিষয় , উভয়ের মধ্যে এই সম্পর্ক স্থাপিত হইল কি সুত্রে ? বলীন্দ্রনাথ এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করিয়ছিলেন এবং এক দিকৃ হইতে ঐ প্রশ্নের উত্তবও দিয়াছিলেন। অন্য দিকৃ হইতে এই প্রসঙ্গের কিঞ্চিং বস্তৃত আলোচন। বর্তমান প্রবন্ধের উদ্দেশ্য। আলোচনায় প্রবৃত্ত হইবার পূৰ্ব্বে প্রসঙ্গক্রমে ধ্বনির উৎপত্তি সম্বন্ধে দুই-চারিটা কথা বলা আবশ্যক। বাণীতে ফু দিলে তাহা হইতে ধ্বনি বাহির হয় ও সেই ধ্বনি শুনিয়া আমরা আনন্দ পাই। কোন কোন ধ্বনি শুনিলেই আনন্দ হয়। শ্ৰীকৃষ্ণ কদমতলায় বঁাশী বাজাইতেন, আর গোপীবা জ্ঞানহার হইয়৷ সেই দিকে ছুটিত। ধ্বনির সহিত এই আনন্দের বা উন্মাদনার এইরূপ সম্পর্ক কিরূপে আসিল, তাহার উত্তর কোন পণ্ডিতে দিতে পারেন না। তবে কোন কোন ধ্বনির সহিত আনন্দের সম্পর্ক আছে, ইহা ঠিক। নতুবা সঙ্গীতবিদ্যাটাই অযথার্থ হইত। কেবল আনন্দের কেন, ক্লেশেরও সম্পর্ক আছে। কোন কোন ধ্বনি যেমন আনন্দ দেয়, কোন কোন ধ্বনি তেমনি ক্লেশের হেতু —যেমন ঢাকের বাদ্য থামিলেই মিষ্ট হয়। কোন ধ্বনি চিত্তে কোন ভাব কিরূপে জাগায় বা কেন জাগায়,বৈজ্ঞানিক পণ্ডিতেরা তাহা বলিতে পাবেন না, তবে কোন ক্ষেত্রে ধ্বনি মধুর হইবে,আর কোন ক্ষেত্রে ধ্বনি কর্কশ হইবে, তাতার মোটামুটি একটা হিসাব দিতে পারেন। বাণী বাজাইলে বাণীর ভিতবে শাবন্ধ বাতাসট। কঁাপিয় উঠে এবং ভিতরের কম্প বাহিরে আসিয়া বাহিরে বায়ুবাশিতে ঢেউ জন্মায়। সেই ঢেউগুলি কানে আসিয়া ধাক্কা দেয় ও সেখানকার স্বায়ুযুম্বে পুনঃ পুনঃ আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ধ্বনির বোধ হয়। সেকেণ্ডে কতগুলি ঢেউ আসিয়া কানে আঘাত দেয়, তাহার সংখ্যা করা চলে। সংখ্যা গণিয়া দেখা গিয়াছে, সেকেণ্ডে দু-শ পাচ-শ, দু-হাজার দশ হাজার বাতাসের ঢেউ আসিয়া ধাক্কা দিলে ধ্বনিজ্ঞান জন্মে। সেকেণ্ডে দু-দশটা মাত্র ঢেউ কানে লাগিলে ধ্বনিজান জন্মে না, আবার সেকেণ্ডে লাখখানেক ঢেউ লাগিলেও ধ্বনিক্সান জন্মে না। ঢেউয়ের সংখ্যাভেদ ধ্বনি কোমল বা তীয়র হয়। সেকেণ্ডে পাচ শ ঢেউ কানে লাগিলে যে ধ্বনি শোনা যাগ, হাজার ঢেউ লাগিলে ধ্বনি তার চেয়ে তীয়র হস, স্বরটা এক গ্রাম উচুতে উঠ। প্রতি সেকেণ্ডে