পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : মহাকাব্যের লক্ষণ 8:Ջ Ֆ যায় ; সমগ্র সমাজের পৃষ্ঠদেশ বিপ্লবের ভূমিকম্পে মুহুর্মুহু আন্দোলিত হইয়া উঠে । অস্তর্নিহিত শক্তিরাশি সমাজের কলেবরকে বিদীর্ণ করিয়া, সহস্র খণ্ডে চূর্ণ করিয়া ইতস্তত বিক্ষিপ্ত করে ; লক্ষ বৎসরের সঞ্চিত সৌন্দর্য্যরাশি ও রূপরাশি সেই তরল অনলপ্রবাহে ভস্মীভূত হইয়া যায়। মহাভারতের বর্ণিত ঘটনার মধ্যে আমব। মহাকালের অট্টহাস্যের প্রতিধ্বনি দূর হইতে শুনিতে পাইয়া স্তব্ধ হই ও মুহমান হই । এ সেই মানবসমাজের চিরন্তন বিপ্লবের ইতিহাস-যাহ যুগযুগান্তরে ঘুরিয়া ফিরিয়। প্রত্যাবৰ্ত্তন করে ; যাহা সাগরগর্ভকে মালক্ষেত্রে উত্তেলিত করিয়া মালক্ষেত্রকে সাগধগর্ভে নিমগ্ন করে ; যাহা পৰ্ব্বতচূড়ার সহিত পৰ্ব্বতচূড়ার সংঘর্ষ উপস্থিত করিয প্রলয়াগ্নির স্বষ্টি করে। সেই অগ্নিশিখায় অরণ্যানী মরুভূমিতে পারণত হয়, জীববুল ধরাপুষ্ঠে অস্থিকঙ্কাল রাখিয়া কালের কুক্ষিতে অস্থহিত হয়। ইহ। সেই সনাতন ধৰ্ম্মেব অভু্যখান, যাহা দলিত, পীড়িত ও সঙ্কুচিত করিয়া ধৰ্ম্মের পুনঃ স্থাপনের জন্য মহেশ্বরের মহৈশ্বৰ্য্যের অবতারণা আবশ্বক হয় ; ভীত, বিস্মিত মানবচিত্ত যখন সেই ঐশ্বর্ঘ্যে । মহিমায় মোহ প্রাপ্ত হইয় তাহার চরণোপান্তে আপনাকে লুষ্ঠিত করে। মহাভারতের বর্ণিত ইতিহাস মানবসমাজের বিপ্লবের ইতিহাস। ভারতবাসীর জাতীয় ইতিহাসে ৰাস্তবিকই কোন দিন এইরূপ মহাবিপ্লব উপস্থিত হইয়াছিল কি না, তাঃ। ঐতিহাসিক ও প্রত্নতত্ত্ববিৎ অতুসন্ধান করিবেন। হয়ত কোন ক্ষুদ্র প্রাদেশিক ঘটনাল স্মৃতি মাত্র অবলম্বন করিয়। মহাকবি আপনার চিত্তবৃত্তির সমাধিকালে মানবসমাeেব মহাবিপ্লবের স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন ; এবং সেই স্বপ্নদৃষ্ট ধ্যানলব্ধ মহাবিপ্লবের,—ধৰ্ম্মের সহিত অধৰ্ম্মের মহাসমরের চিত্র ভবিষ্ণুং যুগের লোকশিক্ষার জন্য অঙ্কিত করিয়া গিয়াছেন। ভূগর্তে সঞ্চিত যে শক্তির বলে হিমাচল ভূগর্ভ ভিন্ন করিয়া গাত্ৰোখান করিয়াছিল, সে শক্তি এখন সাম্যাবস্থা প্রাপ্ত হইয়া উপশান্ত হইয়াছে ; এখন হিমাচলের সাঃদেশ নিবিড বনস্থলীতে খামায়মান হইয়াছে , তাহার আয়ত বক্ষে এখন নিবিড় জলামাল, বারি বর্ষণ করিয়া সেই শামভূমির হরিৎকান্তি অব্যাহত রাখিয়াছে ; আর সেত জলদমালার বহু উদ্ধে ধবলগিরি ও গৌরীশঙ্করের শুভ্রোজ্জল দেহ দূর হইতে দর্শকের বিস্ময় উৎপাদন করিতেছে। যে সামাজিক বিপ্লবে, যে অধৰ্ম্মের অভু্যখানে প্রাচীন ভারতসমাজে অশান্তির ঝটিক বহিয়াছিল, ধৰ্ম্মের প্রতিষ্ঠার পর সেই ব্যাপারের স্মৃতি পৰ্য্যন্ত প্রায় বিলুপ্ত হইয়। গিয়াছে ; ঝটিকা শান্ত হইয়াছে ; মহাসিন্ধুর কল্লোল স্তব্ধ হইয়াছে, বনানীর দাবাগ্নিগর্জন নীরব হইয়াছে ; এখন সেই মহাভারত হইতে সহস্ৰ সাহিত্যধারা প্রবাহিত হইয়। আমাদের জাতীয় সাহিত্যে ও জাতীয় জীবনে শাখাপল্লবের ও পত্রপুষ্পের উদগম করিয়া তাহাকে বিকশিত ও প্রফুল্ল রাখিয়াছে ; আর আমরা দূর হইতে ভীমাৰ্জ্জুন, কণদুৰ্য্যোধন, ভীষ্ম-দ্রোণ, অশ্বখাম-কৃতবৰ্ম্মার দৃঢ়গঠিত, উন্নতশীর্ষ, জ্যোতিদীপ্ত কলেবরকে খবলমুকুটধারী কিরণোৰ্জ্জল ধবলগিরির স্তায় ভারতসমাজক্ষেত্রের দূরস্থিত দিথলয়ে দণ্ডায়মান দেখিয় বিম্মিত ও পুলকিত হইতেছি। এই হিমালয়ম্বাটত উপমাটা এত ক্ষণ অনুগ্রহপরায়ণ পাঠকবর্গের নিতান্তই কৰ্ণশুল হইয়। পড়িয়াছে সন্দ্ৰেন্থ নাই, কিন্তু এই সম্পর্কে আর একটা কথা না বলিয়া নিরস্ত হইতে পারিতেছি না। মহাভারতকে আদর্শ মহাকাব্য বলিয়া গ্রহণ করিয়া এবং হিমগিরির