পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা ; আমিষ ভোজন 8:: ግ° ফলকথা উদ্ভিজ্জ হইতে প্রাণিদেহ নিৰ্ম্মাণে যতটা কষ্ট, এক প্রাণীর দেহ কিঞ্চিৎ রূপান্তরিত হইয়। অন্য প্রাণীর দেহে পরিণতি পাইতে তত কষ্ট নাই। মোটের উপর মাংস হজম সহজ ; উদ্ভিদ হজম করা কষ্টসাধ্য। উদ্ভিজ্জাশী মাটি হইতে খরচ করিয়া ইট তৈয়ার করিয়া ঘর বানান ; মাংসাশী একেবারে তৈয়ারি ইটসংগ্ৰহ করিয়া গৃহ নিৰ্ম্মাণ করেন। উপমাটা অবশুই অত্যন্ত মোটাগোছের হইল। ফলে উদ্ভিজ্জ খাদ্যের অনেকটা বর্জন করিতে হয় ; বাকীটাকেও প্রয়াস সহকারে রক্তমাংসাদিতে পরিণত করিতে হয়। প্রাণিজ খাদ্যে তৃতটা বর্জনীয় অংশও নাই, পরিণতির প্রয়াসটাও কম। এ সকল শরীরবিজ্ঞানসম্মত স্থূল কথা ; ইহা লইয়া বিবাদ করিলে চলিবে না। সংক্ষেপে ইহার অর্থ এই যে, একরাশি উদ্ভিজ্জ ভোজনে যে ফল, অল্প মাত্র মাংস ভোজনেও সেই ফল । রাশি রাশি পদার্থ ভোজন করিতে হয় বলিয়াই প্রধান প্রধান উদ্ভিজ্জাশী জন্তুর পাকযন্ত্রও প্রকাণ্ড, সমস্ত শরীরের আয়তনও মোটের উপর প্রকাগু। গরু, মহিষ, ঘোড়া, উট, হাতী প্রভৃতি উদাহরণ। প্রধান প্রধান মাংসাশী জীবের পাকযন্ত্রও ছোট, শরীরও ছোট । সিংহ ব্যাঘ্রাদি উদাহরণ। এই হিসাবে আমিষ ভোজনে লাভ ; উদ্ভিজ্জ ভোজনে লোকসান । কোন কোন উদ্ভিদের কোন কোন অংশ প্রায় মাংসের মতই পুষ্টিকর হইতে পারে। ছোলা, মুগ, মসুরী, কলাই প্রভৃতি পদার্থ উদাহরণ। কৃষি দ্বারা এই সকল পুষ্টিকর উদ্ভিজ্জ কতক পাওয়া যায়। আবার রসায়নসম্মত উপায়ে সাধারণ উদ্ভিজ্জ পদার্থ হইতে মাংসের মত বা মাংসের অপেক্ষাও পুষ্টিকর পদার্থ তৈয়ার করা না যাইতে পারে, এমন নহে। কিন্তু কৃষিলব্ধ ও রাসায়নিক উপায়লব্ধ পুষ্টিকর খাদ্য সম্প্রতি তেমন প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় না। কাজেই সে উপদেশ নিস্ফল । - মানুষের স্বাভাবিক খাদ্য কি ? উদ্ভিজ্জের মধ্যে ধান, গম প্রভৃতি শস্য, ছোল৷ মুগ প্রভৃতি কলাই ও নানাবিধ ফল মূল সম্প্রতি মহুষ্যের খাদ্য। এই সমস্ত দ্রব্য ক্লষিলব্ধ। মক্তয্যের আদিম অবস্থায় এ সকল দ্রব্য পৃথিবীতে বর্তমান ছিল না ;. মনুষ্য কৃষিবিদ্যা দ্বারা এ সকলের একরকম স্বষ্টি করিয়াছে বলা যাইতে পারে। উদ্ভিজ্জাশী ইতর জন্তু ঘাস পাতা খায়, তাহা মকুষ্যের পাকযন্ত্রের উপযোগী নহে। কাজেই মনুষ্যের আদিম কালে প্রাণিজ খাদ্যই প্রধান ছিল সন্দেহ নাই, একালেও অসভ্য ও বন্য মনুষ্য মৃগয়াজীবী। যাহাদের পশুপালন জীবিকা, তাহাদেরও প্রধান খাদ্য পশুমাংস। পশুহত্যায় সাহায্যের জন্যই আরণ্য বুকের কুক্কুরত্ব প্রাপ্তি ঘটিয়াছে। ভোজনার্থই গোম্যোদি পশু গ্রাম্যত্ব লাভ করিয়াছে। ফলে মনুষ্যের স্বাভাবিক খাদ্য প্রাণিমাংস। প্রাণিমাংস যেখানে কুলায় নাই, যেখানে ভূমি উর্বর ও প্রকৃতি অনুকূল, সেইখানে মনুষ্য বুদ্ধির জোরে কৃষিবিদ্যা সৃষ্টি করিয়া বিবিধ আরণ্য অখাদ্য উদ্ভিজ্জকে মনুষোপযোগী খাদ্য দ্রব্য উৎপাদনে সমর্থ করিয়া লইয়াছে। তথাপি কৃষিজীবী সভ্যতম সমাজেও মনুষ্য অদ্যাপি বস্থল পরিমাণে মাংসভোজী, তাহার কারণ কি ? সভ্য সমাজে মহন্তসংখ্যা এত বেশী যে, কৃষিজাত দ্রব্যে কুলায় না। সেই জন্য ঘাস,