পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শব্বকথা : ধ্বনি-বিচার ల్సి তিনটি করিয়া রূপ আছে। উচ্চারণের স্থিতিকালানুসারে মাত্রার নির্ণয় হয়। কালানুসারে এক মাত্রায় হ্রস্ব, দুই মাত্রায় দীর্ঘ, তিন বা ততোধিক মাত্রায় প্লুত । এইরূপে ঐ তিন স্বরের নয়টি রূপ ; যথা—অ, আ, অ1; ই, ঈ, ঈ, উ, উ, উ। প্লুতত্ব নির্দেশের জন্য আমরা নীচে একটা কধি দিলাম । এষ্ট নয় স্বরের প্রত্যেকের আবার দুইটি করিয়া ভেদ আছে; নাক দিয়া কতক হাওয়া বাহির করিয়া প্রত্যেক স্বর আমরা নাকি সুরে উচ্চারণ করিতে পারি ; যথা—ঈ(অং) ; অথবা কণ্ঠনালী হইতে জোবের সহিত হাওয়া বাহির কবিতে পারি ; যথা--অঃ । এই দুই ভেদ ‘অসুস্বার’ ও ‘বিসর্গ এই দুই লিপিচহ্ন দ্বাবা লিখিয় দেখান হল। .‘অনুস্বাপ’ ও ‘বিসর্গ স্বববর্ণ, না ব্যঞ্জনবর্ণ ইহা লইয়া একটা তর্ক আছে ; উচ্চা স্ববও নহে, ব্যঞ্জনও নহে ; উহা স্বববর্ণের বিকতি সাধন করে মাত্র । উল্লিখিত নয়টি স্বরেব প্রত্যেকটিবই এই ত্ৰিবিধ বিকার হইতে পারে ; যথা—অ অ অ ; আ আ আ , আ আঁ। আঃ । এইরূপে সমৃদয়ে সাতাইশটি স্বর উৎপন্ন হয়। এই সাতাইশটি স্ববধনি (অ ইউ) তিনটি মূল ধ্বনিরই রূপভেদ মাত্ৰ । আমরা সংস্কৃত ভাষার' লিপি বাঙ্গাল ভাষার জন্য গ্রহণ করিয়াছি, কিন্তু বর্ণগুলিব পুরাতন উচ্চারণ রক্ষা কবি নাই । ‘অ’ কারের উচ্চারণ অত্যন্ত বিকত ইষ্টয়া গিয়াছে , উহার প্রকৃত উচ্চারণ হ্রস্ব ‘অ’ । বাঙ্গালী দেশের বাহিরে অকারের প্রাচীন বিশুদ্ধ উচ্চারণ হয়ত এখনও আছে। একটি বিহারী পণ্ডিত সংস্কৃত শ্লোক পাঠের সময় পডিতেছিলেন 'মম' ; আমার ভ্রম হইয়াছিল, তিনি যেন পডিতেছেন ‘মামা' । হয়ত আকারের এই বিরুত উচ্চারণ বহুকাল হইতেই চলিত হইয়াছে। প্রাচীন ব্যাকরণ-গ্রন্থেও আকারের বিবৃত ও সংবৃত দ্বিবিধ উচ্চারণেব কথা রহিয়াছে। সংবৃত উচ্চারণটা বোধ হয় বাঙ্গালীর উচ্চারণেরই অনুরূপ। এতদ্ব্যতীত বহু স্থলে আমরা অকারেব উচ্চারণ হুম্ব ও কারের মত করিয়া লইয়াছি । কথাবার্তার ভাষায় আমরা কোন স্বরেরই হ্রস্ব দীর্ঘ ভেদ করি না , খাটি বাঙ্গালায় 'ঈ', 'উ' রাখিৱার প্রয়োজন আছে কি না, সন্দেহ। আবার বাঙ্গালায় প্লুত উচ্চারণ নাই, এরূপ মনে করাও ঠিক নহে। দূর হইতে রাম 'হরি প্রভৃতির নাম ধরিয়া ডাকিবার সময় রামের রায়ের আকার ও হরির ‘রি’য়ের ইকার তিন মাত্র ছাড়াইয়া যায়। এই সকল স্থলে উচ্চারণ ধু ত উচ্চারণ। ‘অ’ ‘ই’ ‘উ ইহাদের পরস্পর সন্ধিতে সন্ধ্যক্ষর কয়টি উৎপন্ন হয়; যথা— श्र+झे = ७, अ+७ = ॐ श्र +ऍछे = e; ષ + ૯ = હે পদার্থবিজ্ঞানশাস্ত্র এই চারিটি বর্ণের মধ্যে ‘এ’ এবং ওকে, অন্তত তাহাদের বাঙ্গালায় প্রচলিত উচ্চারণকে, সন্ধ্যক্ষর বলিতে চাহিবেন না। শব্দশাস্থে সন্ধ্যক্ষর বলিলে হানি নাই। সংস্কৃত ভাষায় এই চারিটি স্বর স্বভাবতঃ দীর্ঘ; উহাদের ত্বস্ব উচ্চারণ নাই । বাঙ্গালায় একারের এবং ওকারের হ্রস্ব উচ্চারণই প্রসিদ্ধ। বাঙ্গালীর মুখে ইকার ও উকার অতি অল্পেই একার ও ওকারে পরিণত হয়: যথা—মিটান –মেটান ; মিশান—মেশান, শুনা—শোন ; বুঝা—বোঝা । হইবারই কথা – সংস্কৃতেও ইকারের গুণে একার এবং উকারের গুণে ওকার প্রসিদ্ধ।