পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : আমিষ ভোজন ৪২৯ অলঙ্কত করিয়াছেন ও তাহার পাকযন্ত্রকে উদ্ভিজ্জ পরিপাকে সম্পূর্ণ অশক্ত করিয়াছেন, ঠিক সেই ক্ষণেই তাহার স্বভাবকেও নিষ্ঠুর করিয়া দিয়াছেন। মাংসাশী জন্তুর হিংস্র স্বভাব প্রাকৃতিক নিৰ্ব্বাচনের ফল, মাংস ভোজনের আনুষঙ্গিক হইলেও মাংস ভোজনের ফল নহে। মাংস খাইলেই মাথা গরম ও রক্ত গরম হইবে, এমন কোন প্রমাণ নাই। তবে মাংস আহরণের সময় মাথা গরম ও রক্ত গরম হওয়া আবশ্বক, নতুবা মাংস সংগ্রহ চলে না। মনুষ্যের পক্ষেও তাহাই। মাংস খাইলেই যে প্রকৃতি ক্রুর হইবে, তাহা নহে ; তবে যাহাদের মাংস ন হইলে চলে না, তাহাদিগকে বাধ্য হইয়া ক্রুর হইতে হয়। কেন না, মাংস সংগ্রহ ব্যাপারটাই নিষ্ঠুর কাজ । - মাংস একবার উদরগত হইলে আর যে ক্রুরতা বাড়াইবে, তাহার কোন কথা নাই । যাহার মাংসই প্রধান খাদ্য, মাংস যাহাকে স” গ্রহ করিয়া লইতে হইবে, তাহার ব্যবসায় নিষ্ঠুর না হইলে চলিবে না । মাংস ভোজনের ফলে মনুষ্য নিষ্ঠুর হয় না। উগ্ৰস্বভাব হয় না। শরীরবিজ্ঞান কিছুই বলে না। হয় কি না, বিনা পরীক্ষায় প্রমাণেরও আশা নাই। সেরূপ পরীক্ষা হইয়াছে কি না জানি না। হিন্দুর ন্যায় কৃষিজীবী জাতি নিরীহস্বভাব ; কেন না, হিন্দুর দেশে কুষিলন্ধ খাদ্য এত জন্মিয় থাকে যে, মাংস সংগ্রহের তেমন প্রয়োজন নাই । ইংরাজ প্রভৃতি উগ্রস্বভাব ; কেন না, তাহাদের দেশে যে পরিমাণ শস্ত জন্মে, তাহাতে সকলের উদরের জালা থামে না। কাজেই উহাদিগকে নিষ্ঠুর পশুহত্যা ব্যবসায় অবলম্বন করতে হইয়াছে। আজকাল স্বদেশজাত উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ একত্র করিলেও উহাদের আহার সঙ্কলান হয় না ; সেই জন্য উহারা স্বদেশ ছাড়িয়া বিদেশে যাইতেছে ও বিদেশের লোককে ঠেঙ্গাইয়া তাহাদের মুখের আহার কাড়িয়া লইতেছে। এই ব্যবসাটাই নিষ্ঠুর ; উদরের জালায় তাহাদিগকে নিষ্ঠুর হইতে হয়। অনেকে বলেন, শীতপ্রধান দেশে অধিক মাংস আবশ্যক। এ কথার মূল কি, তাহা জানি না। কথাটা বোধ হয় বিজ্ঞানসন্মত নহে। ইউরোপীয়েব মাংসাহারের সহিত তাহাদের দেশের শীতাধিক্যের মুখ্য সম্বন্ধ নাই। মাংস শীত নিবারণে সাহায্য করে না। উদ্ভিজ্জের অভাবে উহারা মাংস খায় ; সেই মাংস সংগ্রহের জন্য তাহাদিগকে বাধ্য হইয়া ক্রুরস্বভাব হইতে হইয়াছে। মাংস ভোজন করিয়া উহার ক্রুরস্বভাব হয় নাই । সংগ্রহ ও ভোজন দুইটা পৃথক ব্যাপার। সংগ্রহকারী নিষ্ঠুর ; ভোজনকারী নিষ্ঠুর ন হইতেও পারে। তবে যিনি ভোজন করেন, তাহাকেই অনেক সময় সংগ্ৰহ করিয়া লইতে হয়, আবার স্বয়ং সংগ্ৰহ না করিতে পারিলে অপরের দ্বারা সংগ্ৰহ করিতে হয় ; স্বয়ং অন্তরালে থাকিয়া সংগ্রহ কার্য্যের অনুমোদন ও সাহায্য করিতে হয় । সুতরাং তিনি গৌণভাবে এই নিষ্ঠুর ব্যবসায়ের জন্য দায়ী। কথাটা দাড়াইল এই। মাংসভোজনে মানসিক বৃত্তিসকল উত্তেজিত হয়, তাহার সম্যক প্রমাণ নাই, তবে মাংস আহরণে নিষ্ঠুরতা আবশ্বক। এবং যিনি স্বয়ং মাংস আহরণ করেন না, অন্যের আহঁত মাংস ভোজন করেন, তিনিও গৌণভাবে নিষ্ঠুরতার প্রশ্ৰয় দিয়া থাকেন। নিষ্ঠুরতা দি অধৰ্ম্ম হয়, তিনি এই অধৰ্ম্মের,