পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : মাতৃমন্দির ßw®ግ বাঙ্গলার ইতিহাস নাই বটে, কিন্তু এই সাহিত্য হইতে আমরা প্রাচীন বাঙ্গালীর নাড়ী-নক্ষত্রের পরিচয় পাই। সেকালের বাঙ্গালী কিরূপে কাদিত, কিরূপে হাসিত, তাহার অস্তরের মৰ্ম্মস্থলে কখন কোন, স্বরে ধ্বনি উঠিত, তাহার আশার কথা, আকাজক্ষার কথা এই প্রাচীন সাহিত্য হইতে আমরা জানিতে পারি। পৃথিবীতে কয়ট জাতি এত দিনের এমন সাহিত্য দেখাইতে পারে ? যাহার এত দিনের এমন সাহিত্য দেখাইতে পারে, তাহাদিগকে আপনার অস্তিত্বের জন্য লজ্জিত হইতে হইবে না। সে আজ দেড় হাজাব বৎসরের কথা, যখন চীন পরিব্রাজক ফ| হিয়াং স্বঙ্গবাজ্যের রাজধানী তাম্রলিপ্তার বন্দর হইতে জাহাজে চাডিয়া স্নি"হল যাত্রা করিয়াছিলেন। বাঙ্গলা সাহিত্য তখন জন্ম গ্রহণ করে নাই , তখনকার বাঙ্গালী যে ভাষায় কথা কহিত তাহাকে বাঙ্গলা ভাষা বলিব কি না, তাহ জানি না। বাঙ্গালী জাতি কিন্তু তখন গঠিত হইয়াছে সন্দেহ নাই। পুণ্ড, চণ্ডাল ও কৈবৰ্ত্ত তখন বোধ করি বাঙ্গল দেশ ছাইয় অবস্থিত ছিল। অনার্য্যের অধিবাস বঙ্গভূমিতে আর্য্যের উপনিবেশ, তাহার বহু পূৰ্ব্বে কোন পৌরাণিক যুগে স্থাপিত হইয়াছিল, তাহার নির্ণয় কঠিন , রামায়ণে ও মহাভারতে, এমন কি, ঐতরেয় ব্রাহ্মণাদি বৈদিক সাহিত্যে তাহার স্মৃতি মাত্র অবশিষ্ট আছে। নরকান্বরের বংশধর কুরুক্ষেত্রের রণস্থলে অক্ষৌহিণী চালনা করিয়াছিলেন , পৌণ্ড ক বাসুদেব যদুপতি বাস্বদেবের স্পৰ্দ্ধ৷ করিতেন ; এই সকল নরপতির দেহমধ্যে আর্য্যশোণিত প্রবাহিত ছিল কি না, জানিবার কোন উপায় নাই। তবে আর্য্যসভ্যতা তাহাদিগকে স্পর্শ করিয়াছিল। সে কোন পুরাতন কালের কথা ! আমি যে কালের কথা বলিতেছি, তাহ সে কালের তুলনায় একাল। এই এ কালেই বা বাঙ্গলার অবস্থা কিরূপ ছিল ও বাঙ্গালীর অবস্থা কিরূপ ছিল ? ভাগীরগী তখনও শত শাখা বিস্তার করিয়া শত মুখে সাগর - সঙ্গমে চলিতেন ; গঙ্গাস্রোতের অন্তরমধ্যে দিগ্বিজয়ী রাজারা যে জয়স্তম্ভ নিখাত করিয়া যাইতেন, পরবৎসরের গঙ্গাস্রোতে তাহ সমূলে উৎপাটিত হইত। সোনার বাঙ্গলার ধানের ক্ষেতে শালিধানের চারা এখনকার মতই উৎখাত হইয়া প্রতিরোপিত হইত ও হেমন্তাগমে কৃষকপত্নী রাত্রি জাগিয়া সোনার ফসল রক্ষা করিত, উজ্জয়িনীর মহাকবি তাহার সাক্ষ্য দিয়া গিয়াছেন। সেকালের রাজধানীতে ও নগরমধ্যে নাগরিকেরা যেরূপ দৌরাত্ম্য করিত, দশকুমারচরিতের বর্ণনার সহিত একালের নাগরিকচরিত মিলাইলে বাঙ্গল দেশে মানবচরিত্রের এই দেড় হাজার বৎসরের সবিশেষ পরিবর্তন ঘটিয়াছে, তাহাও বোধ হয় না। পূর্বে বলিয়াছি, উত্তরবঙ্গের কামরূপ ও পুণ্ড রাজ্য ফা হিয়াংএর সময়েই প্রাচীনত্ব প্রাপ্ত হইয়াছিল। আরও দুই শত বৎসর পরে যখন হয়েং চ্যাং বাঙ্গলা দেশের গ্রামে গ্রামে ও নগরে নগরে ভ্রমণ করিতেছিলেন, তখনও উত্তরবঙ্গের সেই দুই রাজ্য সমৃদ্ধ অবস্থায় বর্তমান ছিল। হুয়েং চ্যাংএর পূর্ববত্তী কালেই পশ্চিমবঙ্গ, আর্য্যাবর্তের গুপ্তসাম্রাজ্যের অন্তভুক্ত হইয়াছিল, গুপ্ত রাজাদের তাম্রশাসন তাহার সাক্ষী। গুপ্ত-সাম্রাজ্য ধ্বংসের পরও তাহার এক ভগ্নাংশ পশ্চিমবঙ্গে আত্মরক্ষা করিতেছিল, হয়েং চ্যাং "স্বয়ং তাহার সাক্ষী। এই সভাস্থলের ক্রোশ দুই তিন