পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8公8 রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র হইত—কিন্তু নেশনের বীজ আছে ; যদি তাহ প্রতিকূল শক্তির আক্রমণ রক্ষা করিয়া, ভূমি ভেদ করিয়া গজাইয়। উঠিবার অবকাশ পায়, তাহা হইলে ভারতবর্ষের ভবিষ্যতের ইতিহাস অন্য আকার ধারণ করিবে । কাজেই এই দুই বৎসরের আন্দোলনকে আমি নিষ্ফল আন্দোলন বলিতে প্রস্তুত নহি । সম্ভবত: রবীন্দ্রবাবুও প্রস্তুত ন;হন—কেন না, এই ভাবের তরঙ্গ প্রবাহিত করিতে যে কয় জন লোকে চেষ্টা করিয়াছেন, তিনি তন্মধ্যে অন্যতম অগ্রণী। জনসভযমধ্যে ভাবের প্রবাহ পরিচালনার প্রধান অধিকার—সাহিত্যিকের। রবীন্দ্রনাথ স্বদেশী ভাষার সাহায্যে যে সাহিত্য স্বষ্টি করিয়াছেন ও করিতেছেন, তাহাতে সেই স্রোতে নূতন নুতন তরঙ্গ উৎপন্ন হইয়াছে সময় সময়তুফানের স্বষ্টি হইয়াছে বলিলেও অত্যুক্তি হইবে না। তুফানে তরণী ছাড়িয়া দিয়া আজ যদি তিনি সামাল সামাল করিতে থাকেন, তাহা হইলে সম্পূর্ণ দোষ নিবপরাধ আরোহীদিগের উপর ষোল আন ন৷ চাঁপাইয়া স্বয়ং কতকটা গ্রহণ করিবেন । , ফলে স্বদেশী আন্দোলনে আর কোন কাজ না হউক—কোন, কাজই হয় নাই, তাহা স্বীকার করিতেছি না—কোন বড় কাজ না হউক, অন্ততঃ আমাদের মনে একটা আশা জাগাইয় দিয়াছে। ভারতবর্ষের জনসাধারণের হৃদয় যে ‘বন্দে মাতরম্ ধ্বনিতে ব্যাকুল হইয়া উঠিবে, ইতিপূৰ্ব্বে তাহার কোন প্রমাণ, কোন লক্ষণই ছিল না। এত দিন শিক্ষিত সম্প্রদায়ের একাংশ তাহীদের শিক্ষালব্ধ জাতীয় ভাবের একটা অভিনয় করিতেন মাত্র , জনসঙ্ঘ কেবল অভিনয় দেখিত মাত্র, অথবা তাহা ও দেখিত না। দেখিলেও এই অভিনয়ের সহিত তাহীদের যে কোন সম্পর্ক আছে, তাহা আদৌ জানিত না । এখন দেশব্যাপী জনসঙ্ঘ না হউক, সেই জনসজেঘর কিয়দংশ সেই ভাবের প্রবাহে ডুব দিয়া উঠিয়াছে, তাহাদের স্বায়ুতন্ত্রীতে একটা আঘাত অনুভব করিয়াছে, তাহাদের আত্মাব মধ্যে একটা নবোদগত অপরিচিতপূৰ্ব্ব অনচুভূতপূৰ্ব্ব বেদনার ও আকাঙ্ক্ষার প্রেরণা পাইয় আপনাতে নব মনুষ্কৃত্বের স্মৃত্তি দেখিয়া ক্ষণেকের জন্য বিহবলতার ও আত্মবিস্মৃতির আনন্দ আস্বাদন করিয়াছে। ১৩১২ সালের ৩০শে আশ্বিন তারিখে আমরা এক দিনের জন্য বিচার বিতর্ক পরিহার করিয়া যে উন্মাদনার জাহ্নবীপ্রবাহে সাতার দিয়া লইয়াছি, তাহাতে আমাদের সারা জীবনের সঞ্চিত ক্লেদ অনেকটা ধুইয়া গিয়াছে, এবং ইহার ফল আমরা আজীবন ভোগ করিব। ভারতের ভাগ্যে বিধাতা যাহাই লিখুন, সে দিনকার ও তৎপরবর্তী কয়েকটা মাসের উপাজিত নূতন ভাবাবেগ আমাদের জীবনে একবারে নিষ্ফল হইবে না। যাহারা অত্যন্ত সাবধানতার সহিত এই মহাভাবের উচ্ছলিত প্রবাহ হইতে আত্মরক্ষা করিয়াছেন, তাহাদের বিজ্ঞতার প্রশংসা করিব, কিন্তু তাহাদের আত্মপ্রবঞ্চনার ভাগ লইতে যাইব না। মোটের উপর আমি বলিতে চাহি যে, পরের উপর কৰ্ম্মের ভার অর্পণ করায়, অথবা পরে আমাদিগকে কৰ্ম্মভার হইতে অব্যাহতি দেওয়ায়, আমরা যে কেবল কৰ্ম্মক্ষমতা ও কর্ণপটুতা হারাইয়াছি, এমন নহে, আমরা কৰ্ম্মে প্রবৃত্তি পৰ্য্যন্ত হারাইতে বসিয়াছি। আমাদের কৰ্ম্মেঞ্জিয়ের পরিচালক পেশীগুলিই যে কেবল জড়ত্ব প্রাপ্ত হইয়াছে, এমন নহে ; আমাদের স্বায়ুযন্ত্র পর্য্যস্ত বিকৃত ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত হইয়৷ পৃড়িয়াছে। এমন ।