পাতা:রায় দীনবন্ধু মিত্র বাহাদুরের জীবনী.djvu/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
রায় দীনবন্ধু মিত্র বাহাদুরের জীবনী।

অনেকগুলি বন্ধুকে একেবারে মুগ্ধ করিয়াছিলেন। তখন জানিতাম না যে সেই তাঁহার শেষ উদ্দীপন। তাহার পর আর কয়েক বার দিবারাত্রি একত্রে বাস করিয়াছি, কিন্তু এই রাত্রের ন্যায় আর তাঁহাকে আনন্দ-উৎফুল্ল দেখি নাই। তাঁহার অসাধারণ ক্ষমতা ক্রমে দুর্ব্বল হইতেছিল। তথাপি তাঁহার ব্যঙ্গশক্তি একেবারে নিস্তেজ হয় নাই। মৃত্যুশয্যায় পড়িয়াও তাহা ত্যাগ করেন নাই। অনেকেই জানেন যে, তাঁহার মৃত্যুর কারণ বিস্ফোটক, প্রথমে একটী পৃষ্ঠ দেশে হয়, তাহার কিঞ্চিৎ উপশম হুইলেই আর একটী পশ্চাৎভাগে হইল। তাহার পর শেষ আর একটী বামপদে ছইল। এই সময় তাঁহার পূর্ব্বোক্ত বন্ধুটী কার্য্যস্থান হইতে তাঁহাকে দেখিতে গিয়াছিলেন। দীনবন্ধু অতি দূরবর্ত্তী মেঘের ক্ষীণ বিদ্যুতের ন্যায় ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন “ফোড় এখন আমার পায়ে ধরিয়াছে।”

 মনুষ্যমাত্রেরই অহঙ্কার আছে;—দীনবন্ধুর ছিল না। মনুষ্য মাত্রেরই রাগ আছে;—দীনবন্ধুর ছিল না। দীনবন্ধুর কোন কথা আমার কাছে গোপন ছিল না, আমি কখন তাঁহার রাগ দেখি নাই। অনেক সময়ে তাঁহার ক্রোধাভাব দেখিয়া তাঁহাকে অনুযোগ করিয়াছি, তিনি রাগ করিতে পারিলেন না বলিয়া অপ্রতিভ হইয়াছেন। অথবা ক্রুদ্ধ হইবার জন্য যত্ন করিয়া, শেষে নিষ্ফল হইয়া বলিয়াছেন “কই, রাগ যে হয় না।”

 তাঁহার যে কিছু ক্রোধের চিহ্ন পাওয়া যায়, তাহা জামাই-বারিকের “ভোঁতারাম ভাটের” উপরে। যেমন অনেকে দীনবন্ধুর গ্রন্থের প্রশংসা করিতেন, তেমনি কতকগুলি লোক তাঁহার গ্রন্থের নিন্দক ছিল। যে খানে বশ সেই খানেই নিন্দা, সংসারের ইহা নিয়ম। পৃথিবীতে যিনি যশস্বী হইয়াছেন, তিনিই সম্প্রদায়বিশেষকর্ত্তৃক নিন্দিত হইয়াছেন। ইহার অনেক কারণ আছে। প্রথম, দোষশূন্য মনুষ্য জন্মে না; যিনি বহু গুণবিশিষ্ট, তাঁহার দোষগুলি, গুণসান্নিধ্য হেতু,