পাতা:রায় দীনবন্ধু মিত্র বাহাদুরের জীবনী.djvu/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
রায় দীনবন্ধু মিত্র বাহাদুরের জীবনী।

দীনবন্ধু যে ইহাতে রাগ করিয়াছিলেন, ইহাই অন্যায়। “ভোঁতারাম ভাট” দীনবন্ধুর চরিত্রে ক্ষুদ্র কলঙ্ক!

 ইহা স্পষ্ট করিয়া বলা যাইতে পারে যে, দীনবন্ধু কখন একটীও অসৎ কার্য্য করেন নাই। তাঁহার স্বভাব তাদৃশ তেজস্বী ছিল না বটে, বন্ধুর অনুরোধ বা সংসৰ্গদোষে নিন্দনীয় কার্য্যের কিঞ্চিৎ সংস্পর্শ তিনি সকল সময়ে এড়াইতে পারিতেন না; কিন্তু যাহা অসৎ, যাহাতে পরের অনিষ্ট আছে, যাহা পাপের কার্য্য, এমত কার্য্য দীনবন্ধু কখনও করেন নাই। তিনি অনেক লোকের উপকার করিয়াছেন, তাঁহার অনুগ্রহে বিস্তর লোকের অন্নের সংস্থান হইয়াছে।

 একটী দুর্লভ সুখ দীনবন্ধুর কপালে ঘটিয়াছিল। তিনি সাধ্বী স্নেহশালিনী পতিপরায়ণ পত্নীর স্বামী ছিলেন। দীনবন্ধুর অল্পবয়সে বিবাহ হয় নাই। হুগলীর কিছু উত্তর বংশবাটী গ্রামে তাঁহার বিবাহ হয়। দীনবন্ধু চিরদিন গৃহসুখে সুখী ছিলেন। দম্পতী-কলহ কখন না কখন সকল ঘরেই হইয়া থাকে, কিন্তু কস্মিল্ কালে মুহূর্ত্ত নিমিত্ত ইঁহাদের কথান্তর হয় নাই। একবার কলহ করিবার নিমিত্ত দীনবন্ধু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হইয়াছিলেন, কিন্তু প্রতিজ্ঞা ব্যর্থ হইয়াছিল। বিবাদ করিতে পারেন নাই। কলহ করিতে গিয়া তিনিই প্রথমে হাসইয়া ফেলেন, কি তাঁহার সহধর্ম্মিণী রাগ দেখিয়া উপহাস দ্বারা বেদখল করেন, তাহা এক্ষণে আমার স্মরণ নাই।

 দীনবন্ধু আটটী সন্তান রাখিয়া গিয়াছেন।

 দীনবন্ধু বন্ধুবর্গের প্রতি বিশেষ স্নেহবান্‌ ছিলেন। আমি ইহা বলিতে পারি যে, তাঁহার ন্যায় বন্ধুর প্রীতি সংসারের একটা প্রধান সুখ। যাঁহারা তাহা হারাইয়াছেন, তাঁহাদের দুঃখ বর্ণনীয় নহে।