পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সম্ভব হত তাহলে যন্ত্রী য়ুরােপের ষড়যন্ত্রে সে ধনে-প্রাণে মারা যেত। আমাদের ভাগ্যে সে সুযােগ ঘটল না, কেননা লােভ ঈর্ষাপরায়ণ। এই প্রকাণ্ড লোভের আওতায় আমাদের ধনপ্রাণ মুষড়ে এল, তৎপরিবর্তে রাজা আমাদের সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন এখনাে ধর্মপ্রাণের যেটুকু বাকি সেটুকু রক্ষা করবার জন্যে আইন এবং চৌকিদারের ব্যবস্থাভার রইল আমার হাতে। এদিকে আমাদের অন্নবস্ত্র বিদ্যাবুদ্ধি বন্ধক রেখে কথাগত প্রাণে আমরা চৌকিদারের উর্দির খরচ জোগাচ্ছি। এই যে সাংঘাতিক ঔদাসীন্য, এর মূলে আছে লােভ। সকল প্রকার জ্ঞানে ও কর্মে যেখানে শক্তির উৎসব বা পীঠস্থান সেখান থেকে বহু নিচে দাড়িয়ে এতকাল আমরা হাঁ করে উপরের দিকে তাকিয়ে আছি আর সেই উর্ধ্বলােক থেকে এই আশ্বাসবাণী শুনে আসছি, তােমাদের শক্তি ক্ষয় শদি হয় ভয় কী, আমাদের শক্তি আছে, আমরা তােমাদের রক্ষা করব।

 যার সঙ্গে মানুষের লোভের সম্বন্ধ তার কাছ থেকে মানুষ প্রয়ােজন উদ্ধার করে, কিন্তু কখনাে তাকে সম্মান করে না। যাকে সম্মান করে না তার দাবিকে মানুষ যথাসম্ভব ছােটো করে রাখে; অবশেষে সে এত সস্তা হয়ে পড়ে যে, তার অসামান্য অভাবেও সামান্য খরচ করতে গায়ে বাজে। আমাদের প্রাণরক্ষা ও মনুষ্যত্বের লজ্জারক্ষার জন্যে কতই কম বরাদ্দ সে কারাে অগােচর নেই। অন্ন নেই, বিদ্যা নেই, বৈদ্য নেই, পানের জল পাওয়া যায় পাঁক ছেঁকে, কিন্তু চৌকিদারের অভাব নেই, আর আছে মােটা মাইনের কর্মচারী, তাদের মাইনে গালফ স্ট্রীমের মতাে সম্পূর্ণ চলে যায় ব্রিটিশ দ্বীপের শৈত্য নিবারণের জন্যে, তাদের পেনশন জোগাই আমাদের অন্ত্যেষ্টিসৎকার-খরচের অংশ থেকে। একমাত্র কারণ লােভ অন্ধ, লোভ নিষ্ঠুর—ভারতবর্ষ ভারতেশ্বরদের লােভের সামগ্রী।

৯০