পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হয়েছে। এই নিদারুণ বৈশ্যযুগের প্রথম সূচনা হল সমুদ্রযানযােগে বিশ্বপৃথিবী আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে। বৈশ্যযুগের আদিম ভূমিকা দস্যু-বৃত্তিতে। দাসহরণ ও ধনহরণের বীভৎসতায় ধরিত্রী সেদিন কেঁদে উঠেছিল। এই নিষ্ঠুর ব্যবসায় বিশেষভাবে চলেছিল পরদেশে। সেদিন মেক্সিকোতে স্পেন শুধু কেবল সেখানকার সােনার সঞ্চয় নয়, সেখানকার সমগ্র সভ্যতাটাকেও রক্ত দিয়ে মুছে দিয়েছে। সেই রক্তমেঘের ঝড় পশ্চিম থেকে ভিন্ন ভিন্ন দমকায় ভারতবর্ষে এসে পড়ল। তার ইতিহাস আলােচনা করা অনাবশ্যক। ধনসম্পদের স্রোত পূর্বদিক থেকে পশ্চিমদিকে ফিরল।

 তারপর থেকে কুবেরের সিংহাসন পাকা হল পৃথিবীতে। বিজ্ঞান ঘােষণা করে দিলে যন্ত্রের নিয়মই বিশ্বের নিয়ম, বাহ্য সিদ্ধিলাভের বাহিরে কোনাে নিত্য সত্য নেই। প্রতিযােগিতার উগ্রতা সর্বব্যাপী হয়ে উঠল, দস্যুবৃত্তি ভদ্রবেশে পেল সম্মান। লােভের প্রকাশ্য ও চোরা রাস্তা দিয়ে কারখানাঘরে, খনিতে, বড়ো বড়ো আবাদে, ছদ্মনামধারী দাসবৃত্তি, মিথ্যাচার ও নির্দয়তা কী রকম হিংস্র হয়ে উঠেছে সে-সম্বন্ধে মুরােপীয় সাহিত্যে রােমহর্ষক বর্ণনা বিস্তর পাওয়া যায়। পাশ্চাত্ত্য ভূখণ্ডে যারা টাকা করে আর যারা টাকা জোগায় অনেক দিন ধরে তাদের মধ্যে হাতাহাতি বেধে গেছে। মানুষের সবচেয়ে বড়াে ধর্ম সমাজধর্ম, লােভ রিপু সব-চেয়ে তার বড়ো হন্তারক। এই যুগে সেই রিপু মানুষের সমাজকে আলােড়িত করে তার সম্বন্ধবন্ধনকে শিথিল ও বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।

 এক দেশে এক জাতির মধ্যেই এই নির্মম ধনার্জন ব্যাপারে যে-বিভাগ সৃষ্টি করতে উদ্যত তাতে যত দুঃখই থাক্ তবু সেখানে সুযোগের ক্ষেত্র খােলা থাকে, শক্তির বৈষম্য থাকতে পারে, কিন্তু অধিকারের বাধা

৯৪