পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অর্থাৎ কোনো গবর্মেণ্টই এর প্রতিকার করতে নিরতিশয় অক্ষম, এ-অপবাদ আমরা একেবারেই স্বীকার করব না।

 এ-কথা চিরদিনই আমার মনে ছিল যে, ভারতের সঙ্গে যে পর-দেশবাসী শাসনকর্তার স্বার্থের সম্বন্ধ প্রবল এবং দরদের সম্বন্ধ নেই, সে গবর্মেণ্ট নিজের গরজেই প্রবল শক্তিতে বিধি ও ব্যবস্থা রক্ষা করতে উৎসাহপরায়ণ, কিন্তু যে-সকল ব্যাপারে গরজ একান্ত আমাদেরই, যেখানে আমাদের দেশকে সর্বপ্রকারে বাঁচিয়ে তুলতে হবে ধনে মনে ও প্রাণে—সেখানে যথােচিত শক্তি প্রয়ােগ করতে এ গবৰ্মেণ্ট উদাসীন। অর্থাৎ, এ-সম্বন্ধে নিজের দেশের প্রতি শাসনকর্তাদের যত সচেষ্টতা যত বেদনা-বােধ, আমাদের দেশের প্রতি তার কিয়দংশও সম্ভব হয় না। অথচ আমাদের ধনপ্রাণ তাদেরই হাতে, যে-উপায়ে যে-উপাদানে আমরা বিনাশ থেকে রক্ষা পেতে পারি সে আমাদের হাতে নেই।

 এমন কি, এ-কথা যদি সত্য হয় যে, সমাজবিধি সম্বন্ধে মূঢ়তাবশতই আমরা মরতে বসেছি তবে এই মূঢ়তা যে-শিক্ষা যে-উৎসাহ দ্বারা দূর হতে পারে সেও ঐ বিদেশী গবৰ্মেণ্টেরই রাজকোষে ও রাজমর্জিতে। দেশব্যাপী অশিক্ষাজনিত বিপদ দূর করবার উপায় কমিশনের পরামর্শমাত্র দ্বারা লাভ করা যায় না—সে-সম্বন্ধে গবর্মেণ্টের তেমনি তৎপর হওয়া উচিত যেমন তৎপর ব্রিটিশ গবর্মেণ্ট নিশ্চয়ই হত যদি এই সমস্যা ব্রিটেন দ্বীপের হােত। সাইমন কমিশনকে আমাদের প্রশ্ন এই যে, ভারতের অজ্ঞতা-অশিক্ষার মধ্যে এতবড়ো মৃত্যুশেল নিহিত হয়েএতদিন রক্তপাত করছে এই কথাই যদি সত্য হয়, তবে আজ একশ ষাট বৎসরের ব্রিটিশ শাসনে তার কিছুমাত্র লাঘব হল না কেন? কমিশন কি সাংখ্যতথ্য যােগে দেখিয়েছেন পুলিসের ডাণ্ডা জোগাতে ব্রিটিশরাজ যে খরচ করে থাকেন তার তুলনায় দেশকে শিক্ষিত করতে এই সুদীর্ঘকাল কত খরচ

৯৮