পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দেখলুম তখন সেটা আমাকে যতবড়ো আনন্দ দিলে এতটা হয়তাে স্বভাবত অন্যকে না দিতে পারে। তবুও মূল কথাটা মন থেকে তাড়াতে পারি নে, সে হচ্ছে এই যে, আজ কেবল ভারতে নয়, সমস্ত পৃথিবীতেই যে-কোনো বড়াে বিপদের জালবিস্তার দেখা যাচ্ছে তার প্রেরণা হচ্ছে লােভ— সেই লােভের সঙ্গেই যত ভয়, যত সংশয়; সেই লােভের পিছনেই যত অস্ত্রসজ্জা, যত মিথুক ও নিষ্ঠুর রাষ্ট্রনীতি।

 আর-একটা তর্কের বিষয় হচ্ছে ডিকটেটরশিপ অর্থাৎ রাষ্ট্রব্যাপারে নায়কতন্ত্র নিয়ে। কোনাে বিষয়েই নায়কিয়ানা আমি নিজে পছন্দ করি নে। ক্ষতি বা শাস্তির ভয়কে অগ্রবর্তী করে অথবা ভাষায় ভঙ্গীতে বা ব্যবহারে জিদ প্রকাশের দ্বারা নিজের মত-প্রচারের রাস্তাটাকৈ সম্পূর্ণ সমতল করবার লেশমাত্র চেষ্টা আমি কোনােদিন নিজের কর্মক্ষেত্রে করতে পারি নে। সন্দেহ নেই যে একনায়কতার বিপদ আছে বিস্তর; তার ক্রিয়ায় একতানতা ও নিত্যত অনিশ্চিত, যে চালক ও যারা চালিত তাদের মধ্যে ইচ্ছার অসম্পূর্ণ যােগসাধন হওয়াতে বিপ্লবের কারণ সর্বদাই ঘটে, তা ছাড়া সবলে চালিত হওয়ার অভ্যাস চিত্তের ও চরিত্রের বলহানি করে— এর সফলতা যখন বাইরের দিকে দুই-চার ফসলে হঠাৎ আঁজলা ভরে তােলে, ভিতরের শিকড়কে দেয় মেয়ে।

 জনগণের ভাগ্য যদি তাদের সম্মিলিত ইচ্ছার দ্বারাই সৃষ্ট ও পালিত না হয় তবে সেটা হয় খাঁচা, দানাপানি সেখানে ভালো মিলতেও পারে, কিন্তু তাকে নীড় বলা চলে না, সেখানে থাকতে থাকতে পাখা যায় আড়ষ্ট হয়ে। এই নায়কতা শাস্ত্রের মধ্যেই থাক্‌, গুরুর মধ্যেই থাক্, আর রাষ্ট্রনেতার মধ্যেই থাকু, মনুষ্যত্বহানির পক্ষে এমন উপদ্রব কিছুই নেই।

 আমাদের সমাজে এই ক্লীবত্বসৃষ্টি বহুযুগ থেকে ঘটে আসছে এবং

১০১