পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লােকের মধ্যেই ব্যাপ্ত। সেখানে উপরিতল নিম্নতল আছে, সেই উপরি তলের কাছেই বাতি দীপ্ত হয়ে জলে, নিচের তল অদীপ্ত। কিন্তু সেই ভেদ অনেকটা আকস্মিক; সমস্ত তেলের মধ্যেই দীপ্তির শক্তি আছে। সে হিসাবে জ্যোতির জাতিভেদ নেই; নিচের তেল যদি উপরে ওঠে তাহলে উজ্জ্বলতার তারতম্য ঘটে না। সেখানে নিচের দলের পক্ষে উপরের দলে উত্তীর্ণ হওয়া অসাধ্য নয়; সেই চেষ্টা নিয়তই চলছে।

 আর-এক শ্রেণীর বাতি আছে; তাকে বলি বিজলি বাতি। তার মধ্যে তারের কুণ্ডলী আলাে দেয়, তার আগাগােড়াই সমান প্রদীপ্ত। তাঁর মধ্যে দীপ্ত-অদীপ্তের ভেদ নেই। এই আলো, দিবালােকের প্রায় সমান। য়ুরােপীয় সমাজে এই বাতি জ্বালাবার উদ্যোগ সব দেশে এখন চলছে না; কিন্তু কোথাও কোথাও শুরু হয়েছে—এর যন্ত্রটাকে পাকা করে তুলতে হয়তাে এখনো অনেক ভাঙচুর করতে হবে, যন্ত্রের মহাজন কেউ কেউ হয়তাে দেউলে হয়ে যেতেও পারে, কিন্তু পশ্চিম মহাদেশে এইদিকে একটা ঝােঁক পড়েছে সে-কথা আর গােপন করে রাখবার জো নেই। এইটে হচ্ছে প্রকাশের চেষ্টা, মানুষের অন্তর্নিহিত ধর্ম; এই ধর্মসাধনায় সকল মানুষই অবাহত অধিকার লাভ করবে, এই রকমের একটা প্রয়াস ক্রমশই যেন ছড়িয়ে পড়ছে।

 কেবল আমাদের হতভাগ্য দেশে দেখি, মাটির প্রদীপে যে-আলো একদিন এখানে জ্বলেছিল তাতেও অজি বাধা পড়ল। আজ আমাদের দেশের ডিগ্রিধারীরা পল্লীর কথা যখন ভাবেন তখন তাদের জন্যে অতি সামান্য ওজনে কিছু করাকেই যথেষ্ট বলে মনে করেন। যতক্ষণ আমাদের এইরকমের মনোভাব ততক্ষণ পল্লীর লোকেরা আমাদের

১৩১