পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

স্বদেশের গণ্ডী পেরিয়ে উঠে ধ্বনিত হয়েছিল। কিন্তু টিঁকল না। এদের এখানকার বিপ্লবের বাণীও বিশ্ববাণী। আজ পৃথিবীতে অন্তত এই একটা দেশের লোক স্বাজাতিক স্বার্থের উপরেও সমস্ত মানুষের স্বার্থের কথা চিন্তা করছে। এ বাণী চিরদিন টিঁকবে কি না কেউ বলতে পারে না। কিন্তু স্বজাতির সমস্যা সমস্ত মানুষের সমস্যার অন্তর্গত এই কথাটা বর্তমান যুগের অন্তর্নিহিত কথা। একে স্বীকার করতেই হবে।

 এই যুগে বিশ্ব-ইতিহাসের রঙ্গভূমির পর্দা উঠে গেছে। এতকাল যেন আড়ালে আড়ালে রিহার্স্যাল চলছিল, টুকরো টুকরো ভাবে, ভিন্ন ভিন্ন কামরায়। প্রত্যেক দেশের চারিদিকে বেড়া ছিল। বাহির থেকে আনাগোনা করবার পথ একেবারে ছিল না তা নয়, কিন্তু বিভাগের মধ্যে মানব-সংসারের যে-চেহারা দেখেছি আজ তা দেখি নে। সেদিন দেখা যাচ্ছিল একটি-একটি গাছ, আজ দেখছি অরণ্য। মানব-সমাজের মধ্যে যদি ভার-সামঞ্জস্যের অভাব ঘটে থাকে সেটা আজ দেখা দিচ্ছে পৃথিবীর একদিক থেকে আর একদিক পর্যন্ত। এমন বিরাট করে দেখতে পাওয়া কম কথা নয়।

 টোকিওতে যখন কোরীয় যুবককে জিজ্ঞাসা করেছিলুম, তোমাদের দুঃখটা কী, সে বললে, আমাদের কাঁধে চেপেছে মহাজনের রাজত্ব, আমরা তাদের মুনাফার বাহন। আমি প্রশ্ন করলুম, যে-কারণেই হোক তোমরা যখন দুর্বল তথন এই বোঝ নিজের জোরে ঝেড়ে ফেলবে কী উপায়ে। সে বললে, নিরুপায়ের দল আজ পৃথিবী জুড়ে, দুঃখে তাদের মেলাবে—যারা ধনী যারা শক্তিমান তারা নিজের নিজের লোহার সিন্ধুক ও সিংহাসনের চারদিকে পৃথক হয়ে থাকবে, তারা কখনো মিলতে পারবে না। কোরিয়ার জোর হচ্ছে তার দুঃখের জোর।[১]

  1. পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য।
১০