পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অভিপ্রায়। এ সম্বন্ধে দুটো কথা সর্বদাই আমার মনে আন্দোলিত হয়েছে—জমির স্বত্ব ন্যায়ত জমিদারের নয়, সে চাষীর; দ্বিতীয়ত সমবায়নীতি অনুসারে চাষের ক্ষেত্র একত্র করে চাষ না করতে পারলে কৃষির উন্নতি হতেই পারে না। মান্ধাতার আমলের হাল লাঙল নিয়ে আল-বাঁধা টুকরাে জমিতে ফসল ফলানাে আর ফুটো কলসীতে জল আনা একই কথা।

 কিন্তু এই দুটো পন্থাই দুরূহ। প্রথমত চাষীকে জমির স্বত্ব দিলেই সে-স্বত্ব পরমুহূর্তেই মহাজনের হাতে গিয়ে পড়বে, তার দুঃখতার বাড়বে বই কমবে না। কৃষিক্ষেত্র একত্রীকরণের কথা। আমি নিজে একদিন চাষীদের ডেকে আলােচনা করেছিলুম। শিলাইদহে আমি যে-বাড়িতে থাকতুম, তার বারান্দা থেকে দেখা যায় খেতের পর খেত নিরন্তর চলে গেছে দিগন্ত পেরিয়ে। ভােরবেলা থেকে হাল লাঙল এবং গােরু নিয়ে একটি-একটি করে চাষী আসে, আপন টুকরাে খেতটুকু ঘুরে ঘুরে চাষ করে চলে যায়। এই রকম ভাগ-করা শক্তির যে কতটা অপচয় ঘটে প্রতিদিন সে আমি স্বচক্ষে দেখেছি। চাষীদের ডেকে যখন সমস্ত জমি একত্র করে কলের লাঙলে চাষ করার সুবিধের কথা বুঝিয়ে বললুম তারা তখনই সমস্ত মেনে নিলে। কিন্তু বললে, আমরা নির্বোধ, এতবড় ব্যাপার করে তুলতে পারব কী করে। আমি যদি বলতে পারতুম, এ ভার আমিই নেব তাহলে তখনই মিটে যেতে পারত। কিন্তু আমার সাধ্য কী। এমন কাজের চালনাভার নেবার দায়িত্ব আমার পক্ষে অসম্ভব—সে শিক্ষা সে শক্তি আমার নেই।

 কিন্তু এই কথাটা বরাবর আমার মনে জেগেছিল। যখন বােলপুরের কো-অপারেটিভের ব্যবস্থা বিশ্বভারতীর হাতে এল তখন আবার একদিন আশা হয়েছিল এইবার বুঝি সুযােগ হতে পারবে। যাদের হাতে

১৮