পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিদ্যাশিক্ষা ব্যর্থ হয়ে যায়। এইজন্যেই আমাদের দেশে প্রধানত দেশের কাজ কংগ্রেসের পাণ্ডালে এবং খবরেব কাগজের প্রবন্ধমালায় শিক্ষিত সম্প্রদায়ের বেদনা উদ্ঘােষণের মধ্যেই পাক চ্ছিল। আমাদের কলমে-বাঁধা হাত দেশকে গড়ে তােলবার কাজে এগােতেই পারলে না।

 ঐ দেশের হাওয়াতেই আমিও তো মানুষ, সেইজন্যেই জোরের সঙ্গে মনে করতে সাহস হয় নি যে, বহু কোটি জনসাধারণের বুকের উপর থেকে অশিক্ষা ও অসামর্থ্যের জগদ্দল পাথর ঠেলে নামানাে সম্ভব। অল্পস্বল্প কিছু করতে পারা যায় কিনা এতদিন এই কথাই ভেবেছি। মনে করেছিলুম, সমাজের একটি চির-বাধাগ্রস্ত তলা আছে সেখানে কোনােকালেই সূর্যের আলাে সম্পূর্ণ প্রবেশ করানাে চলবে না, সেই জন্যেই সেখানে অন্তত তেলের বাতি জ্বালাবার জন্যে উঠে পড়ে লাগা উচিত। কিন্তু সাধারণত সেটুকু কর্তব্যবােধও লোকের মনে যথেষ্ট জোরের সঙ্গে ধাক্কা মারতে চায় না, কারণ যাদের আমরা অন্ধকারে দেখতেই পাই নে, তাদের জন্যে যে কিছু করা যেতে পারে এ-কথা স্পষ্ট করে মনে আসে না।

 এই রকম স্বল্পসাহস মন নিয়েই রাশিয়াতে এসেছিলুম, শুনেছিলুম এখানে চাষী ও কর্মিকদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারের পরিমাণ অনেক বেড়ে চলেছে। ভেবেছিলুম তার মানে ওখানে পল্লীর পাঠশালায় শিশুশিক্ষার প্রথম ভাগ বড়ােজোর দ্বিতীয় ভাগ পড়ানাের কাজ সংখ্যায় আমাদের চেয়ে বেশি হয়েছে। ভেবেছিলুম ওদের সাংখ্যিক তালিকা নেড়েচেড়ে দেখতে পাব ওদের কজন চাষী নাম সই করতে পারে আর কজন চাষীর নামতা দশের কোঠা পর্যন্ত এগিয়েছে।

 মনে রেখাে, এখানে যে-বিপ্লবে জারের শাসন লয় পেলে সেটা ঘটেছে ১৯১৭ খ্রীষ্টাব্দে। অর্থাৎ তেরাে বছর পার হল মাত্র। ইতিমধ্যে

২০