পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সত্যের সঙ্গে লড়াই বেধে যায়। পশ্চিম-মহাদেশের মানুষ জোর জিনিসটাকে অত্যন্ত বেশি বিশ্বাস করে। যে-ক্ষেত্রে জোরের যধার্থ কাজ আছে সে-ক্ষেত্রে সে খুবই ভালো, কিন্তু অন্যত্র সে বিপদ ঘটায়। সত্যের জোরকে গায়ের জোরের দ্বারা যত প্রবলভাবেই আমরা মেলাতে চেষ্টা করি, একদা তত প্রবলভাবেই তাদের বিচ্ছেদ ঘটে।

 মধ্য-এশিয়ার (Bashkir Republic) বাস্কির রিপাব্লিকের একজন চাষী বললে, “আজও আমার নিজের স্বতন্ত্র খেত আছে, কিন্তু নিকটবর্তী ঐকত্রিক কৃষিক্ষেত্রে আমি শীঘ্রই যোগ দেব। কেননা দেখেছি স্বাতন্ত্রিক প্রণালীর চেয়ে ঐকত্রিক প্রণালীতে ঢের ভালো জাতের এবং অধিক পরিমাণে ফসল উৎপন্ন করানো যায়। যেহেতু প্রকৃষ্টভাবে চাষ করতে গেলেই যন্ত্র চাই,—ছোটো খেতের মালিকের পক্ষে যন্ত্র কেনা চলে না। তা ছাড়া, আমাদের টুকরো জমিতে যন্ত্রের ব্যবহার অসম্ভব।”

 আমি বললুম, “কাল একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীর সঙ্গে আলাপ হল। তিনি বললেন, মেয়েদের এবং শিশুদের সর্বপ্রকার সুযোগের জন্যে সোভিয়েট গবর্মেণ্টের দ্বারা যে-রকম সব ব্যবস্থা হয়েছে এ-রকম আর কোথাও হয় নি। আমি তাকে বললুম, তোমরা পারিবারিক দায়িত্বকে সরকারি দায়িত্ব করে তুলে হয়তো পরিবারের সীমা লোপ করে দিতে চাও। তিনি বললেন, সেটাই যে আমাদের আশু সংকল্প তা নয়—কিন্তু শিশুদের প্রতি দায়িত্বকে ব্যাপক করে দিয়ে যদি স্বভাবতই একদা পরিবারের গণ্ডী লোপ পায় তাহলে এই প্রমাণ হবে সমাজে পারিবারিক যুগ সংকীর্ণতা এবং অসম্পূর্ণতা বশতই নবযুগের প্রসারতার মধ্যে আপনিই অন্তর্ধান করেছে। “যা হোক, এ-সম্বন্ধে তোমাদের কী মত জানতে ইচ্ছে করি। তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদের একত্রীকরণের নীতি বজায় রেখে পরিবার বজায় থাকতে পারে।”

৩১