পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হাতড়িয়ে পুরাকালীন শিল্পসামগ্রী উদ্ধার করবার জন্যে। কত পুঁথি কত ছবি কত খােদকারির কাজ সংগ্রহ হল তার সীমা নেই।

 এ তো গেল ধনীগৃহে বা ধর্মমন্দিরে যা-কিছু পাওয়া গেছে তারই কথা। দেশের সাধারণ চাষীদের কর্মিকদের কৃত শিল্পসামগ্রী, পূর্বতন কালে যা অবজ্ঞাভাজন ছিল, তার মূল্য নিরূপণ করবার দিকেও দৃষ্টি পড়েছে। শুধু ছবি নয়, লােকসাহিত্য লােকসংগীত প্রভৃতি নিয়েও প্রবলবেগে কাজ চলছে।

 এই তাে গেল সংগ্রহ, তার পরে এই সমস্ত সংগ্রহ নিয়ে লােকশিক্ষার ব্যবস্থা। ইতিপূর্বেই তার বিবরণ লিখেছি। এত কথা যে তােমাকে লিখছি তার কারণ এই, দেশের লােককে আমি জানাতে চাই, আজ কেবলমাত্র দশ বছরের আগেকার রাশিয়ার জনসাধারণ আমাদের বর্তমান জনসাধারণের সমতুল্যই ছিল; সােভিয়েট শাসনে এইজাতীয় লােককেই শিক্ষার দ্বারা মানুষ করে তােলবার আদর্শ কতখানি উচ্চ। এর মধ্যে বিজ্ঞান সাহিত্য সংগীত চিত্রকলা সমস্তই আছে,—অর্থাৎ আমাদের দেশের ভদ্রনামধারীদের জন্যে শিক্ষার যে-আয়ােজন তার চেয়ে অনেক গুণেই সম্পূর্ণতর।

 কাগজে পড়লুম সম্প্রতি দেশে প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন-উপলক্ষে হুকুম পাস হয়েছে প্রজদের কান ম’লে শিক্ষাকর আদায় করা, এবং আদায়ের ভার পডেছে জমিদারের ’পরে। অর্থাৎ যারা অমনিতেই আধমরা হয়ে রয়েছে শিক্ষার ছুতাে করে তাদেরই মার বাড়িয়ে দেওয়া।

 শিক্ষাকর চাই বই কি, নইলে খরচ জোগাবে কিসে। কিন্তু দেশের মঙ্গলের জন্যে যে-কর, কেন দেশের সবাই মিলে সে-কর দেবে না। সিভিল সার্ভিস আছে, মিলিটারি সার্ভিস আছে, গভর্নর ভাইসরয় ও

৬২