পাতা:রূপসী বোম্বেটে - দীনেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রূপসী বোম্বেটে
১৩

 আমেলিয়া আবেগ ভরে বলিলেন, “আইনে অন্যায়ের প্রতিকার নাই? প্রবঞ্চনার দণ্ড নাই? না থাক্‌, আমি স্বয়ং ইহার প্রতিকার করিব।”

 ক্রুদ্ধা যুবতী এটর্ণির বাড়ী হইতে বাহির হইয়া রাজপথের বিপুল জনস্রোতে কোথায় অদৃশ্য হইলেন, কেহ তাহা দেখিল না, কেহ তাহার সন্ধানও লইল না। সংসারে যাহার আপনার বলিতে কেহ নাই, যাহার মাথা রাখিবারও স্থান নাই, সে জীবিত আছে কি মরিয়াছে, কে তাহার অনুসন্ধান করিবে?

(৩)

 পূর্ব্বোক্ত ঘটনার পর ছয় বৎসর চলিয়া গিয়াছে।

 ছয় বৎসর পরে গ্রীষ্মকালের এক দিন মধ্যাহ্নে দক্ষিণ মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ-সন্নিকটে একখানি প্রকাণ্ড জাহাজ নঙ্গর করিয়া সমুদ্র-তরঙ্গে ঈষৎ আন্দোলিত হইতেছিল। জাহাজখানির বর্ণ বকপক্ষের ন্যায় শুভ্র; শুভ্র বেশধারী নাবিকেরা জাহাজের ডেকের উপর স্ব স্ব কার্য্যে রত ছিল। সমুদ্রবক্ষঃ-প্রবাহিত মুক্ত সমীরণ ডেকের উপর হিল্লোলিত হইতেছিল।

 ডেকের এক প্রান্তে সুশীতল ছায়ায় একখানি বেতের চেয়ারে একটি যুবতী বসিয়াছিলেন; যুবতী সৌন্দর্য্যের সজীব প্রতিমা, এমন রূপসী রমণী লক্ষ জনের মধ্যে একজনও দেখা যায় কি না সন্দেহ। যুবতীর পাশে একটি বেত্র নির্ম্মিত ক্ষুদ্র টেবিলের উপর এক গ্লাস লেবুর সরবৎ, তাহাতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বরফ খণ্ড ভাসিতেছিল। যুবতীর ক্রোড়ে একখানি পুস্তক, তিনি অবনত মস্তকে পুস্তক খানি পাঠ করিতেছিলেন।