পাতা:লঘুগুরু প্রবন্ধাবলী - রাজশেখর বসু.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাধু ও চলিত ভাষা
৮৭

মার্জিতজনের মৌখিকভাষা দুইএরই সদ্‌গুণ বজায় থাকে। সংস্কৃত সমাসবদ্ধ পদের দ্বারা যে বাক্‌সংকোচ লাভ হয় তা আমরা চাই, আবার মৌখিকভাষার সহজ প্রকাশশক্তিও হারাতে চাই না। চলিতভাষার লেখকরা একটু অবহিত হলেই সর্বগ্রাহ্য সর্বপ্রকাশক লৈখিকভাষা প্রতিষ্ঠালাভ করবে। বলা বাহুল্য, গল্পাদি লঘু সাহিত্যে পাত্রপাত্রীর মুখে সব রকম ভাষারই স্থান আছে, মায় তােতলামি পর্যন্ত।

 এখন আমার প্রস্তাব সংক্ষেপে নিবেদন করি।―

 (১) প্রচলিত সাধুভাষার কাঠামাে অর্থাৎ অন্বয়পদ্ধতি বা syntax বজায় থাকুক। ইংরেজী ভঙ্গীর অনুকরণ সাধারণে বরদাস্ত করবে না, তাতে কিছুমাত্র লাভও নেই।

 (২) ক্রিয়াপদ ও সর্বনামের সাধুরূপের বদলে চলিতরূপ গৃহীত হােক।

 (৩) অন্যান্য অ-সংস্কৃত ও সংস্কৃত শব্দের চলিতরূপ গৃহীত হােক। যদি অনভ্যাসের জন্য বাধা হয়, তবে কতকগুলির সাধুরূপ কতকগুলির চলিতরূপ নেওয়া হােক। যে শব্দের সাধু ও মৌখিক রূপের ভেদ আদ্য অক্ষরে, তার সাধুরূপই বজায় থাকুক, যথা—‘ওপর, পেছন, পেতল, ভেতর’ না লিখে ‘উপর, পিছন, পিতল, ভিতর’। যার ভেদ মধ্য বা অন্ত্য অক্ষরে, তার মৌখিকরূপই নেওয়া হােক, যথা—‘কুয়া, মিছা, সুতা, উঠান, পুরানাে’ স্থানে ‘কুয়াে, মিছে, সুতো, উঠন, পুরনো’।

 (৪) যে সংস্কৃত শব্দ চলিতভাষায় অচল নয়—অর্থাৎ