পাতা:লাজুকলতা - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্তু সে তো গেল ভিন্ন কথা। তোমার নিজের কথা ভাবিছ না। তুমি ? নিজের ভালমন্দের হিসেব দাদার এদিকে ঠিক আছে, তোমার হিসেবটা তুমি করছি না ? নিজেকে এই প্রশ্ন করার জন্যই প্ৰাণটা যেন ছটফট করছিল, কিন্তু প্রশ্নটা স্পষ্ট করে তুলতে পারে নি। কিসে যেন আচ্ছন্ন করে রেখেছিল স্বাধীন চিন্তা। মুগ্ধ কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে কান্ত শাস্তিময়ীর মুখের দিকে চেয়ে থাকে । শান্তিময়ী আবার বলে, দাদার আবার বদনাম কিসের ? হোমরা চোমরা ব্যাটছেলে, এসব বদনামে তার কি এসে যায় ? লোকে বরং তারিফ করবে। কিন্তু তুমি বাছা মেয়েছেলে, সুনাম বদনামে তোমার জীবনে ওলোট পালোট হয়ে যাবে। ঠাণ্ডা মাথায় নিজের দিকটা ভাল করে ভাবে মাথাই গুলিয়ে যাচ্ছে ভাবব কি । মেয়ে মানুষের মাথা গুলিয়ে গেলে চলে ? একটা সোজা কথা তো বুঝতে পারছি ? বদনামের ফলে হয়তো ওই মাধববাবুটি ছাড়া সারা জীবনে তোমার আর গতি থাকবে না। ঘরে ঘরে বৌগুলির যে দশা তোমারও প্ৰায় তেমনি দাড়াবে। হতাশা নয়, একটা ক্ষোভ নিয়ে কান্ত বাড়ী ফেরে। অনেক ব্যাপারে অনেকবার বুকটা তার জ্বালা করেছে, কিন্তু এ ক্ষোভ অন্য ধরনের, এ ক্ষোভ আর মিটবে না। সে জাতীয়া জীব, এত কষ্টে এত চেষ্টায় লেখাপড়া শিখে স্বাধীনভাৰে রোজগার করবার অধিকার এ সমাজে তার জন্মগত নয়-এই ক্ষোভ ঘুচবার নয়-পুরানো অভ্যস্ত নালিশটাই আবার নতুন করে তীব্ৰভাবে নাড়া খেলেও ধীরে ধীরে আবার থিতিয়েও যেতে পারত। শান্তিময়ী 8)