পাতা:লালন শাহ ও লালন গীতিকা.djvu/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( ७ ) কিন্তু এই যে ‘মনের মানুষের কাছে ভক্ত-হৃদয়ের আতি ; এই যে নালিশ (শিকওয়া), এ-তৌ হতাশ প্রাণের কাতর আর্তনাদ ; এ যে না পাওয়ার বেদনা ! কিন্তু যে জন তর্শকে পেয়েছে সে তো নিশ্চিন্ত আরামে তারই ধ্যানে মগ্ন হ’য়ে থাকে। তার বাণীও যায় সেই প্রেমের অতলতায় হারিয়ে । লালন বলেন— “আছে যার মনের মানুষ আপন মনে, সেকি আর জপে মালা । নির্জনে সে বসে বসে দেখছে খেলা । কাছে রয় ডাকে তারে উচ্চস্বরে কোন পাগলা । ওরে যে য। বোঝে তাই সে বুঝে থাকে ভোলা । যেথা যার ব্যথা নেহাত সেই খানে হাত ডলা মলা, তেমনি জেনো মনের মানুষ মনে তোলা ।” এই মনের মানুষের প্রেমে সুফী হন মস্তানা, দিউয়ানা ; বাঙলা দেশের বাউল ( বাতুল ? ) শব্দটি তার সমার্থক কি না, ভেবে দেখা যেতে পারে । ” মুসলিম সুফী-বাউলদের রচনায় চৈতন্য-প্রশস্তি দেখে অনেকে তাদেরকে চৈতন্যপন্থী বৈষ্ণব ইত্যাদি বলে মনে করেন । কিন্তু মনে রাখতে হবে, বাংলা সাহিত্যে রাধা-কৃষ্ণ প্রেমবিষয়ক শতাধিক মুসলিম পদকর্তার আবির্ভাব হয়েছিলো। মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠকবি আলাওল, সৈয়দ সুলতানও রাধা কৃষ্ণ বিষয়ক পদ লিখেছিলেন, তাই ব’লে তাদেরকে তো কেউ বৈষ্ণব বলেন নি । ১. লালনশাহী গীতিতে উল’ শব্দটি ‘সন্ধান’ অর্থে ব্যবহৃত হ’য়েছে । এই সন্ধান মনের মানুষের সন্ধান হ’লে ‘বাউল’কে খুদা সন্ধানী (সুফীদের তালিব’) বলা যেতে পারে । তা হ’লে এর অর্থ দাড়ায় —বা+উল, অর্থাৎ যে সন্ধানের সংগে বর্তমান ; এক কথায় ‘সন্ধানী’ । এ-ব্যাখ্যা স্বয়ং লালনেরই প্রদত্ত বলে জানা যায় ।