পাতা:লালন শাহ ও লালন গীতিকা.djvu/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ द्वा ] অর্থাৎ সহজ (আত্ম ) সমৰ্পণ, স্মরণ ও সেবা, এই তিনের যোগে হয় 'fতরপানি ; তারই সঙ্গমকুলে হয় (সাধকের ) স্নান, এই-ই তো সহজ তীৰ্থ । এই সহজ কিন্তু কোনো তান্ত্রিক গুহ্য সাধনার কথা নয়—ইসলামের ‘সিরাতুল মুস্তাকাম’ বা সহজ-সরল পথের ইশারা । “তিরপানী’ও তাই ইড়া-পিঙ্গলা ও স্বযুমার সংগমস্থলে নয়—খুদাতায়ালায় আত্মসমর্পণ, স্মরণ ( যিকর ) ও সেবা ( খিদমত ) এই তিনের মিলন মোহনায় । আবার বৌদ্ধ নিরঞ্জন বা শুন্য সুফীদের ভাষায় পূর্ণ (খুদাতায়ালা) হ’য়েই দেখা দিয়েছেন— দাদু বলেন—“শুন্য সরোবর মীন মন নীর নিরঞ্জন দেব। দাদু যন্থ রস বিলসিয়ে ঐছে অলখ অভেব।” অর্থাৎ সহজ শুন্য সরোবরে ‘মন’ই হ’ল মীন, ‘নীর’ নিরঞ্জন দেব ; হে দাদু, এই রসেই কর বিলাস, অনির্বচনীয় সেই রস, অজ্ঞেয় তার রহস্য - এই প্রসংগে উল্লেখযোগ্য যে, মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে মুসলিম কবিগণ নিরঞ্জন শব্দটিকে আল্লাহ শব্দের প্রতিশব্দ রূপেই গ্রহণ করেছিলেন । আমাদের একটি ভুল ধারণ। এই যে, লালনের গানে শরীয়তের স্বীকৃতি নেই, তাই তাকে মুসলমান বলা যায় না । কিন্তু লালনের গানে শরীয়তের স্বীকৃতি নেই, এ-কথা কে বলেছে ? লালন তো সর্বত্রই শরীয়তের স্বীকৃতি দিয়েছেন। তার গানেও এই স্বীকৃতি অতি স্পষ্ট । তবে তার কাছে শরীয়তের চেয়ে মারেফতের মূল্য বেশী মনে হয়— “শরাকে সরপোষ লেখা যায়, বস্তু মারেফত সে ঢাকা আছে তায় । সরপোষ তুলে দিয়ে ফেলে । লালন বস্তু-ভিখারী ।” ১ দাদু ঃ ক্ষিতি মোহন সেন সম্পাদিত, পৃঃ ১৮৪