পাতা:লালন শাহ ও লালন গীতিকা.djvu/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ ] এর পরেও যখন জাতি নিয়ে পীড়াপীড়ি শুরু হয়, তিনি বলে ফেলেন--- “বিবিদের নাই মুসলমানী পৈতা যার নেই সেও বাওনী, বোঝে। রে ভাই দিব্যজ্ঞানী লালন তেমনি খাতনার জাত একখান ।” লালনের খাতনা দেওয়া হ’য়েছে । বাস, আর কেন ? মোট কথা, লালন-গীতি একাধারে বাংলা ভজন, ইসলামী মারফতীমুর্শিদী ও গযল-গীতির উৎস মুখ খুলে দিয়েছিলো । তা না হ’লে আমরা রবীন্দ্রনাথের বাউল ঢঙের ভজন-গীতি ও নজরুল ইসলামের গযল-গীতির সন্ধান পেতাম কি না সন্দেহ । অবশ্ব প্রশ্ন হ’তে পারে, এ-সব তো গেল তত্ত্বকথা ; বাংল। সাহিত্য যে লালনকে দাবী করে, তার মূলে কোন সত্য নিহিত আছে কি না ? অর্থাৎ লালনকে সত্যিকারের কবি বা সাহিত্য সাধক বলা যায় কি না ? কিন্তু বলা হয়েছে, তিনি মূলতঃ কবি নন—তত্ত্বরসিক, তত্ত্ব সাধনাই তার সঙ্গীত স্বষ্টির মূল উৎস—রস সেখানে উপলক্ষ্য মাত্র । কিন্তু যেহেতু সেই তত্ত্ব সাধনার প্রধান বাহন গান, তাই গানের খাতিরে সুর, ছল ও ভাব একত্রে সম্মিলিত হয়ে একটি কবিত্বের পরিমণ্ডল গড়ে উঠেছে । তাই তত্ত্বরসিক সাধক কবির গান কবিতা হয়ে উঠেছে । এই হিসেবে লালন কবি বই কি ? ফারসী সাহিত্যের বিখ্যাত সুফী-সাধকদের মত লালন একাধারে তত্ত্বরসিক ও কবি । বর্তমান গ্রন্থের ‘জিজ্ঞাসা’ শীর্যক গীতিংকলন অধ্যায়ে তার এই কবিত্বমণ্ডিত পদগুলি একত্রে প্রকাশিত হ’য়েছে । সুধী-পাঠক এই সংগে সেগুলি পড়ে দেখতে পারেন । পাঠকদের অবগতির জন্য এখানে তার কয়েকটি স্তবক তুলে দেওয়া গেল— ১. চক্ষু আঁধার দিলের ধোকায় মেঘের আড়ে পাহাড় লুকায় কি রঙ্গ সাই দেখছে সদায় বসে নিগুম ঠাই ।