পাতা:লিপিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুরোনো বাড়ি
২১

একটা আধা-বয়সী দাসী সমস্ত দিন খাটে, আর গৃহিণীর সঙ্গে ঝগড়া করে; বলে ‘“চল্লুম”, কিন্তু যায় না।

 বাড়ির এই ভাগটায় রোজ একটু আধটু মেরামত চল্‌চে।

 ফাটা সাসির উপর কাগজ আঁটা হল; বারান্দায় রেলিঙের ফাঁকগুলোতে বাঁখারি বেঁধে দিলে; শোবার ঘরে ভাঙা জান্‌লা ইঁট দিয়ে ঠেকিয়ে রাখ্‌লে; দেয়ালে চুনকাম হ’ল, কিন্তু কালো ছাপগুলোর আভাস্‌ ঢাকা পড়ল না।

 ছাদে আল্‌সের পরে গামলায় একটা রোগা পাতাবাহারের গাছ হঠাৎ দেখা দিয়ে আকাশের কাছে লজ্জা পেলে। তার পাশেই ভিত ভেদ করে অশথ গাছটি সিধে দাঁড়িয়ে; তার পাতাগুলো এদের দেখে যেন খিল্‌‍ খিল্ করে হাস্‌তে লাগ্‌ল।

 মস্ত ধনের মস্ত দারিদ্র্য। তাকে ছোট হাতের ছোট কৌশলে ঢাকা দিতে গিয়ে তার আবরু গেল।

 কেবল উত্তর দিকের উজাড় ঘরটির দিকে কেউ তাকায় নি। তার সেই জোড়-ভাঙা দরজা আজো কেবল বাতাসে আছ্‌ড়ে পড়চে—হতভাগার বুক-চাপ্‌ড়ানির মত।