বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:লিপিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
লিপিকা

 তার পরে অনেক কথা। জেল থেকে ছেলেটি ফিরে এল। কিন্তু দীর্ঘপথ আর শেষ হয় না। তেপান্তর মাঠের চেয়েও সে দীর্ঘ এবং সঙ্গিহীন। কতবার অন্ধকারে তাকে শুন্‌তে হল, হাঁউমাউ খাঁউ, মানুষের গন্ধ পাঁউ। মানুষকে খাবার জন্যে চারিদিকে এত লোভ।

 রাস্তার শেষ নেই কিন্তু চলার শেষ আছে। একদিন সেই শমে এসে সে থাম্‌ল।

 সেদিন তাকে দেখবার লোক কেউ ছিল না। শিয়রে কেবল একজন দয়াময় দেবতা জেগে ছিলেন। তিনি যম।

 সেই যমের সোনার কাঠি যেম্‌নি ছোঁয়ানো অম্‌নি এ কী কাণ্ড! সহর গেল মিলিয়ে, স্বপন গেল ভেঙে।

 মুহূর্ত্তে আবার দেখা দিল সেই রাজপুত্তুর। তার কপালে অসীমকালের রাজটীকা। দৈত্যপুরীর দ্বার সে ভাঙবে, রাজকন্যার শিকল সে খুলবে।

 যুগে যুগে শিশুরা মায়ের কোলে বসে খবর পায়,—সেই ঘরছাড়া মানুষ তেপান্তর মাঠ দিয়ে কোথায় চল্‌ল। তার সাম্‌নের দিকে সাত সমুদ্রের ঢেউ গর্জ্জন করচে।

 ইতিহাসের মধ্যে তার বিচিত্র চেহারা; ইতিহাসের পরপারে তার একই রূপ,—সে রাজপুত্তুর।