পাতা:লিপিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সুয়োরাণীর সাধ
৭১

 তারপরে ঘরে ফিরে একলা বসে আছি, মুখে কথা নেই।

 রাজা এসে বল্‌লে, “তোমার কী হয়েচে, কি চাই?”

 আমি বল্‌লেম, “আমার বড় সাধ রোজ খাব শালুক ফুল, বনের ফল, ক্ষেতের শাক, আমার ছেলে নিজের হাতে তুলে আন্‌বে।”

 রাজা বললে, “আচ্ছা বেশ, তার আর ভাবনা কি?”

 সোনার পালঙ্কে বসে আছি, ছেলে ডালি নিয়ে এল। তার সর্ব্বাঙ্গে ঘাম, তার মুখে রাগ। ডালি পড়ে রইল, লজ্জা পেলেম।

 তার পরে আমার কি হল কি জানি।

 একলা বসে থাকি, মুখে কথা নেই। রাজা রোজ এসে আমাকে শুধোয়, “তোমার কী হয়েছে, কি চাই?”

 সুয়োরানী হয়েও কি চাই সে কথা লজ্জায় কাউকে বল্‌তে পারি নে। তাই তোমাকে ডেকেচি স্যাঙাৎনী। আমার শেষ কথাটি বলি তোমার কানে, “ঐ দুয়োরানীর দুঃখ আমি চাই।”

 স্যাঙাৎনী গালে হাত দিয়ে বল্‌লে, “কেন বল ত?”

 সুয়োরানী বল্‌লে, “ওর ঐ বাঁশের বাঁশীতে সুর বাজ্‌ল, কিন্তু আমার সোনার বাঁশী কেবল বয়েই বেড়ালেম, আগ্‌লে বেড়ালেম, বাজাতে পারলেম না।”