পাতা:লুকোচুরি - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
লুকোচুরি।
১৭

 আমি বিষম ফাঁপরে পড়িলাম। ওঁকার দেখিয়া যেমন পত্রলেখককে হিন্দু বলিয়া ভাবিয়াছিলাম, শূকর-মূর্ত্তি দেখিয়া তেমনই তাহাকে অহিন্দু বলিয়া মনে হইল। পত্র-প্রেরক কোন্ ধর্ম্মাবলম্বী জানিবার জন্য আমার ভয়ানক কৌতূহল জন্মিল। আমি কাগজখানি আরও মনোযোগ সহকারে দেখিতে লাগিলাম।

 আরও আধঘণ্টা নিস্তব্ধভাবে লক্ষ্য করিবার পর কাগজখানির অপর এক কোণে “অহিংসা পরমোধর্ম্ম” এই কয়েকটা কথা অতি ক্ষুদ্রাক্ষরে লেখা রহিয়াছে দেখিতে পাইলাম। আমি তখনই বুঝিতে পারিলাম, পত্র-লেখক বৌদ্ধধর্ম্মাবলম্বী। তাহার পর ভাবিলাম, পত্রে যাহা লেখা আছে, তাহা পড়িতে না পারিলে কোন কার্য্য হইবে না। যদিও আমি উহা না পড়িয়াই বুঝিয়াছিলাম যে, সেখানি সাবধান পত্র, তথাপি যতক্ষণ উহা পাঠ করিতে না পারিব, ততক্ষণ নিশ্চিন্ত হইতে পারিব না।

 এই স্থির করিয়া আমি সেই কাগজখানিতে যাহা লেখা ছিল, সেইগুলি অপর একখানি কাগজে নকল করিয়া লইলাম। এই প্রকার সাঙ্কেতিক পত্র অনেক পাঠ করিয়াছি সুতরাং চেষ্টা করিলে যে ইহাও পাঠ করিতে সমর্থ হইব, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই।

 লেখাগুলিকে যত প্রকারে সাজাইতে পারা যায় সেই সমস্ত উপায়েই সাজাইলাম, কিন্তু তাহাতেও উহার কোনরূপ মর্ম্মভেদ হইল না। কি করিয়া উহার অর্থ বুঝিব, কেমন করিয়া সাজাইলে উহার ঠিক অর্থ করিতে পারিব, এই প্রকার চিন্তা করিতেছি, এমন সময় দেখিলাম, পত্রের প্রত্যেক কথাই তিন অক্ষরের। আমার মনে এক নূতন উপায় উদ্ভাবিত হইল। আমি ভাবিলাম, লেখাগুলি তিন লাইন করিয়া সাজাইলে উহার অর্থবোধ হইতে পারে।