পাতা:লুকোচুরি - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০
দারােগার দপ্তর, ১৯৬ সংখ্যা।




নিভৃতস্থানে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিল, এখন তাঁহাকে হীনবল ও তেজোহীন দেখিয়া সাহস করিয়া তাহারই সম্মুখে বাহির হইল। পশ্চিমগগন নানা বর্ণে চিত্রিত হইয়া অপূর্ব্ব শোভা ধারণ করিল। মৃদুমন্দ মলয়পবন সদ্য প্রস্ফুটিত জাতি, যুথী, বেলা, মল্লিকাদি পুষ্পবাসে স্নাত হইয়া চারিদিকে ছুটাছুটি করিয়া বেড়াইতে লাগিল। আমি অফিসের অপর কার্য্যগুলি শেষ করিয়া অনাথনাথের সহিত সাক্ষাৎ করিবার বাসনায় কোন নিভৃত স্থানে বসিয়া তাঁহার অপেক্ষা করিতে লাগিলাম।

 বেলা দ্বিপ্রহরের পর জনাথনাথের সস্ত্রীক থানায় আসিবার কথা ছিল। বেলা প্রায় পাঁচটা বাজিতে চলিল, অথচ তাঁহাদের কাহারও দেখা নাই। সকল কার্য্য বন্ধ করিয়া আমি তাঁহাদের আশায় বসিয়াছিলাম, অথচ তাঁহারা আসিলেন না দেখিয়া, আমি মনে মনে অত্যন্ত বিরক্ত হইলাম এবং তখনই গাত্রোত্থান করিয়া গৃহের বাহিরে আসিয়া পায়চারি করিতে লাগিলাম।

 এমন সময়ে একখানি সেকেণ্ড ক্লাসের ভাড়াটীয়া গাড়ী থানার ভিতরে প্রবেশ করিল। গাড়ীর কোচবাক্সে অনাথনাথকে দেখিয়া বুঝিতে পারিলাম, তাঁহার স্ত্রী গাড়ীর ভিতরে আছেন।

 গাড়ীখানি স্থির হইলে অনাথনাথ অবতরণ করিলেন। আমি তখনই অন্দর হইতে একজন দাসীকে ডাকিয়া অনাথবাবুর স্ত্রীকে ভিতরে লইয়া যাইতে আদেশ করিলাম।

 সৌভাগ্যক্রমে তখন থানায় অপর কোন লোক ছিল না। আমার কথা শুনিয়া দাসী সেই গাড়ীর নিকটে গেল এবং অনাথবাবুর স্ত্রীর হাত ধরিয়া নামাইয়া বাড়ীর ভিতর লইয়া গেল। অনাথনাথ আমারই নিকটে দাঁড়াইয়া রহিলেন।