পাতা:লুকোচুরি - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
লুকোচুরি।
৩৫

 বি-পি। প্রয়োজন হয় নাই।

 আ। সে কি! বিমলার স্বামী বর্ত্তমান; তাঁহার অনুমতি ভিন্ন তাহাকে কোথাও লইয়া যাইতে পারেন না। তাহার উপর আপনাকে মৃত বলিয়া রাষ্ট্র করিয়াছেন, সে জন্য আপনাকে বিলক্ষণ শাস্তি পাইতে হইবে। আপনি এখন কাহার সহিত কথা কহিতেছেন তাহা জানেন?

 আমার কথা শুনিয়া বিমলার পিতা অনেকটা নরম হইলেন। তিনি সহসা কোন উত্তর করিলেন না। কিছুক্ষণ চিন্তা করিয়া বলিলেন, “বড় সাধ করিয়া আসিয়াছিলাম আজ রাত্রে কন্যার মুখচন্দ্রিমা দর্শন করিব, কিন্তু আপনি যিনিই হউন—আমার সে সাধে বাদ সাধিলেন। এত ষড়যন্ত্র, এত পরামর্শ, এত কাণ্ড সমস্ত পণ্ড করিলেন। বলুন দেখি, আপনার কি অপকার করিয়াছি?”

 কথাগুলি কর্কশ হইলেও তিনি যে ভাবে বলিলেন, তাহাতে আমার বড় কষ্ট হইল, মনে কেমন দয়ার উদয় হইল। বিনীতভাবে জিজ্ঞাসা করিলাম, “মহাশয়! কন্যার মুখ দেখিবার জন্য এত ব্যস্ত কেন? আপনার দুই পুত্র ত আপনারই সঙ্গে বাস করিতেছেন।”

 আমি অবশ্য না জানিয়াই ঐ কথা বলিয়াছিলাম। তিনি আমার কথা শুনিয়া কাঁদিয়া ফেলিলেন। কাঁদিতে কাঁদিতে বলিলেন, “আজ্ঞে তাহা হইলে কি আজ আমার এমন দুর্দ্দশা হয়! বৌদ্ধেরা তাহাদিগকে অনশনে রাখিয়া বোধ হয় হত্যা করিয়াছে। অনেক দিন হইল, তাহাদের মুখ দেখি নাই। এ জনমে আমার প্রাণের পুতলিগণকে কি আর দেখিতে পাইব? বোধ হয় সে আশা নাই।”