ভোঁদা। (চোখে জল) আজ্ঞে, তা জানি না।
পণ্ডিত। জানিস্ নে? ভুত কিসে হয়, জানিস্ নে?
ভোঁদা। আজ্ঞে তা জানি। মলেই ভূত হয়।
পণ্ডিত। শূওর। গাধা। ভূ ধাতুর উত্তর ক্ত ক’রে ভূত হয়।
ভোঁদা এতক্ষণে বুঝিল। মনে মনে স্থির করিল, মরিলেও যা হয়, ভূ ধাতুর উত্তর ক্ত করিলেও তা হয়। তখন সে বিনীতভাবে পণ্ডিত মহাশয়কে জিজ্ঞাসা করিল, “আজ্ঞে, ভূ ধাতুর উত্তর ক্ত করিলে কি শ্রাদ্ধ করিতে হয়?”
পণ্ডিত মহাশয় আর সহ্য করিতে পারিলেন না। বিরাশী সিক্কা ওজনে ছাত্রের গালে এক চপেটাঘাত করিলেন। ছাত্র পুস্তকাদি ফেলিয়া দিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে বাড়ী চলিয়া গেল। তখন বৃষ্টি ধরিয়া আসিয়াছিল, রঙ্গ দেখিবার জন্য আমিও সঙ্গে সঙ্গে গেলাম। ভোঁদার মাতার গৃহ বিদ্যালয় হইতে বড় বেশী দূর নয়। ভোঁদা গৃহপ্রবেশকালে কান্নার স্বর দ্বিগুণ বাড়াইল, এবং আছাড়িয়া পড়িল। দেখিয়া ভোঁদার মা তার কাছে এসে সান্ত্বনায় প্রবৃত্ত হইল। জিজ্ঞাসা করিল, “কেন, কি হয়েছে, বাবা?”
ছেলে মাকে ভেঙ্গাইয়া বলিল, “এখন কি হয়েছে, বাবা! এমন ইস্কুলে আমায় পাঠাইয়েছিলি কেন পোড়ারমুখী?
মা। কেন, কি হয়েছে, বাবা?
ছেলে। পোড়ারমুখী এখন বলেন, কি হয়েছে, বাবা। শিগ্গির তোর ভূ ধাতুর পর ক্ত হৌক। শিগ্গির হৌক। আমি তোর শ্রাদ্ধ করি।
মা। সে আবার কি বাপ! কাকে বলে?
ছেলে। শিগ্গির তোর ভূ ধাতুর পর ক্ত হৌক। শিগ্গির হৌক।
মা। সে কি মরাকে বলে বাপ?
ছেলে। তা না ত কি? আমি তাই বল্তে পারি নাই ব’লে পণ্ডিত মশাই আমায় মেরেছে।
মা। অধঃপেতে মিন্সে! আক্কেল নেই। আমার এই এক রত্তি ছেলের আর কত বিদ্যা হবে। যে কথা কেউ জানে না, তাই বলতে পারে নি ব’লে ছেলেকে মারে! আজ মিন্সেকে আমি একবার দেখবো।
এই বলিয়া গাছকোমর বাঁধিয়া ভোঁদার মাতা পণ্ডিত মহাশয়ের দর্শনাকাঙ্ক্ষায় চলিলেন। আমিও পিছু পিছু চলিলাম। সেই সুপুত্রবতীকে অধিক দূর যাইতে হইল