না। তখন পাঠশালা বন্ধ হইয়াছিল। পণ্ডিত মহাশয় গৃহে প্রত্যাবর্ত্তন করিতেছিলেন, পথিমধ্যেই উভয়ে সাক্ষাৎ হইল। তখন ভোঁদার মা বলিল, “হ্যাঁ গা পণ্ডিত মহাশয়, যা কেউ জানে না, আমার ছেলে তাই বলতে পারে নি ব’লে কি এমনি মার মারতে হয়?”
পণ্ডিত। ও গো, এমন কিছু শক্ত কথা জিজ্ঞাসা করি নাই। কেবল জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম, ভূত কেমন ক’রে হয়।
ভোঁদার মা। ভূত হয় গঙ্গা না পেলেই। তা ও সব কথা ও ছেলেমানুষ কেমন ক’রে জানবে গা? ওসব কথা আমাদের জিজ্ঞাসা কর।
পণ্ডিত। ও গো, সে ভূত নয় গো।
ভোঁদার মা। তবে কি গোভূত?
পণ্ডিত। সেসব কিছু নয় গো, তুমি মেয়েমানুষ কি বুঝ্বে? বলি, একটা ভূত শব্দ আছে।
ভোঁদার মা। ভূতের শব্দ আমি অমন কত শুনেছি। তা ও ছেলেমানুষ, ওকে কি ও সব কথা ব’লে ভয় দেখাতে আছে?
আমি দেখিলাম যে, এ পণ্ডিতে পণ্ডিতে সমস্যা, শীঘ্র মিটিবে না। আমি এ রঙ্গের অংশ পাইবার আকাঙ্ক্ষায় অগ্রসর হইয়া পণ্ডিত মহাশয়কে বলিলাম, “মহাশয়, ও স্ত্রীলোক, ওর সঙ্গে বিচার ছেড়ে দিন। আমার সঙ্গে বরং এ বিষয়ের কিছু বিচার করুন।”
পণ্ডিত মহাশয় আমাকে ব্রাহ্মণ দেখিয়া, একটু সম্ভ্রমের সহিত বলিলেন, “আপনি প্রশ্ন করুন।”
আমি বলিলাম, “আচ্ছা, ভূত ভূত করিতেছেন, বলুন দেখি ভূত কয়টি?”
পণ্ডিত সন্তুষ্ট হইয়া বলিলেন, “ভাল, ভাল। পণ্ডিতে পণ্ডিতের মতই কথা কয়। শুন্লি মাগী?” তার পর আমার দিকে ফিরিয়া, এমনই মুখখানা করিলেন, যেন বিদ্যার বোঝা নামাইতেছেন। বলিলেন, “ভূত পাঁচটি।”
তখন ভোঁদার মা গর্জ্জিয়া উঠিয়া বলিল, “তবে রে মিন্সে? তুই এই বিদ্যায় আমার ছেলে মারিস্। ভূত পাঁচটা! পাঁচ ভূত, না বারো ভূত?”
পণ্ডিত। সে কি, বাছা! ও ঠাকুরটিকে জিজ্ঞাসা কর, ভূত পঞ্চ। ক্ষিত্যপ,—
ভোঁদার মা। বারো ভূত নয় ত আমার এতটা বিষয় খেলে কে? আমি কি এমনই দুঃখী ছিলাম?