ভোঁদার মা তখন কাঁদিতে আরম্ভ করিল। আমি তখন তাহার পক্ষাবলম্বন পূর্ব্বক বলিলাম, “উনি যা বলিলেন, তা হতে পারে। অনেক সময়েই শুনা যায়, অনেকের বিষয় লইয়া ভূতগণ আপনাদিগের পিতৃকৃত্য সম্পন্ন করে। কখন শোনেন নাই, অমুকের টাকাটায় ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ হইতেছে?”
কথাটা শুনিয়া, পণ্ডিত মহাশয় ঠিক বুঝিতে পারিলেন না, আমি ব্যঙ্গ করিতেছি, কি সত্য বলিতেছি। কেন না, বুদ্ধিটা কিছু স্থূল। তাঁকে একটু ভেবলাপানা দেখিয়া আমি বলিলাম, “মহাশয়, এ বিষয়ের প্রমাণ প্রয়োগ ত সকলই অবগত আছেন। মনু বলিয়াছেন,—
“কৃপণানাং ধনঞ্চৈব পোষ্যকুষ্মাণ্ডপালিনাম্।
ভূতানাং পিতৃশ্রাদ্ধেষু ভবেন্নষ্টং ন সংশয়ঃ॥”[১]
পণ্ডিত মহাশয়ের সংস্কৃতজ্ঞান ঐ ভূ ধাতুর উত্তর ক্ত পর্য্যন্ত। কিন্তু এ দিকে বড় ভয়, পাছে সেই শিষ্যমণ্ডলীর সম্মুখে, বিশেষতঃ ভোঁদার মার সম্মুখে আমার কাছে পরাস্ত হয়েন—অতএব যেমন শুনিলেন, “ভূতানাং পিতৃশ্রাদ্ধেষু ভবেন্নষ্টং ন সংশয়ঃ।” অমনই উত্তর করিলেন, “মহাশয়, যথার্থই আজ্ঞা করিয়াছেন। বেদেই ত আছে,—
“অস্তি গোদাবরীতীরে বিশালঃ শাল্মলীতরুঃ”
শুনিয়া ভোঁদার মা বড় তৃপ্ত হইল। এবং পণ্ডিত মহাশয়ের ভূয়সী প্রশংসা করিয়া বলিল, “তা, বাবা! তোমার এত বিদ্যা, তবু আমার ছেলে মার কেন?”
পণ্ডিত। আরে বেটি, তোর ছেলেকে এমনই বিদ্বান্ করিব বলিয়াই ত মারি। না মারিলে কি বিদ্যা হয়?
ভোঁদার মা। বাবা। মারিলে যদি বিদ্যা হয়, তবে আমাদের বাড়ীর কর্ত্তাটির কিছু হলো না কেন? ঝাঁটায় বল, কোঁস্তায় বল, আমি ত কিছুতেই কসুর করি না।
পণ্ডিত। বাছা! ওসব কি তোমাদের হাতে হয়? ও আমাদের হাতে।
ভোঁদার মা। বাবা। আমদের হাতে কিছুই জোরের কসুর নাই। দেখিবে?
এই বলিয়া ভোঁদার মা একগাছা বাঁকারি কুড়াইয়া লইল। পণ্ডিত মহাশয়, এইরূপ হঠাৎ অধিক বিদ্যালাভের সম্ভাবনা দেখিয়া সেখান হইতে ঊর্দ্ধশ্বাসে প্রস্থান করিলেন।
- ↑ অস্যার্থ। কৃপণদিগের ধন আর যাহারা পোষ্যপুত্ররূপ কুষ্মাণ্ডগুলি প্রতিপালন করেন, তাঁহাদিগের ধন ভূতের বাপের শ্রাদ্ধে নষ্ট হইবে সন্দেহ নাই।