পাতা:লোকরহস্য-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০
লোকরহস্য

শুনিয়াছি, সেই অবধি পণ্ডিত মহাশয়, আর ভোঁদাকে কিছু বলেন নাই। ভূ ধাতু লইয়া পাঠশালায় আর গোলযোগ হয় নাই। ভোঁদা বলে, “মা, এক বাঁকারিতে পণ্ডিত মহাশয়কে ভূতছাড়া করিয়াছে।”

দ্বিতীয় সংখ্যা-ধর্ম্ম-শিক্ষা

I. THEORY

 “পড় বাবা, মাতৃবৎ পরদারেষু।”

 ছেলে। সে কাকে বলে, বাবা?

 বাপ। এই যত স্ত্রীলোক, পরের স্ত্রী, সবাইকে আপনার মা মনে করিতে হয়।

 ছেলে। তারা সবাই আমার মা?

 বাপ। হাঁ বাবা, তা বৈ কি।

 ছেলে। বাবা, তবে তোমার বড় জ্বালা হলো। আমার মা হ’লে তারা তোমার কে হলো, বাবা?

 বাপ। ছি! ছি! ছি! অমন কথা কি বলতে আছে। পড়,

“মাতৃবৎ পরদারেষু পরদ্রব্যেষু লোষ্ট্রবৎ।”

 ছেলে। অর্থ কি হলো, বাবা?

 বাপ। পরের সামগ্রীকে লোষ্ট্রের মত দেখ্‌বে।

 ছেলে। লোষ্ট্র কি?

 বাপ। মাটির ঢেলা।

 ছেলে। বাবা, তবে ময়রা বেটাকে আর সন্দেশের দাম না দিলেও হয়—মাটির ঢেলার আর দাম কি?

 বাপ। তা নয়। পরের সামগ্রী মাটির মত দেখ্‌বে—নিতে যেন ইচ্ছা না হয়।

 ছেলে। বাবা, কুমারের ব্যবসা শিখ্‌লে হয় না?

 বাপ। ছি বাবা। তোমার কিছু হবে না দেখ্‌ছি। এখন পড়,

“মাতৃবৎ পরদারেষু পরদ্রব্যেষু লোষ্ট্রবৎ।
আত্মবৎ সর্ব্বভূতেষু যঃ পশ্যতি স পণ্ডিতঃ॥”

 ছেলে। আত্মবৎ সর্ব্বভূতেষু কি, বাবা?