পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ケ লোকসাহিত্য কল্পনার বাষ্প, কত চিন্তার অভিাস, কত ভাষার ছিন্ন থও, আমাদের ব্যবহারজগতের কত শত পরিত্যক্ত বিস্তৃত বিচুত পদার্থ-সকল অলক্ষিত অনাবশ্বকভাৰে ভাসিয়া ভাসিয়া বেড়ায় । যখন আমরা সচেতনভাবে কোনো-একটা বিশেষ দিকে লক্ষ করিয়া চিত্ত৷ করি তখন এই-সমস্ত গুঞ্জন থামিয়া যায়, এই-সমস্ত রেণুজাল উড়িয়া যায়, এইসমস্ত ছায়াময়ী মরীচিকা মুহূর্তের মধ্যে অপসারিত হয় ; আমাদের কল্পনা, আমাদের বুদ্ধি একটা বিশেষ ঐক্য অবলম্বন করিয়া একাগ্রভাবে প্রবাহিত হইতে থাকে। আমাদের মন-নামক পদার্থটি এত অধিক প্রভুত্বশালী ষে, সে যখন সজাগ হইয়া বাহির হইয়া আসে তখন তাহার প্রভাবে আমাদের অন্তর্জগতের এবং বহির্জগতের অধিকাংশই সমাচ্ছন্ন হইয়া যায়— তাহারই শাসনে, তাহারই বিধানে, তাহারই কথায়, তাহারই অনুচরপরিচরে নিখিল সংসার আকীর্ণ হইয়া থাকে। ভাবিয়া দেখে, আকাশে পাখির ডাক, পাতার মর্মর, জলের কল্লোল, লোকালয়ের মিশ্রিত ধ্বনি, ছোটো বড়ো কত সহস্র প্রকার কলশব্দ নিরস্তর ধ্বনিত হইতেছে— এবং আমাদের চতুর্দিকে কত কম্পন, কত আন্দোলন, কত গমন, কত আগমন, ছায়ালোকের কতই চঞ্চল লীলাপ্রবাহ প্রতিনিয়ত আবর্তিত হইতেছে– অথচ তাহার মধ্যে কতই যৎসামান্য অংশ আমাদের গোচর হইয়া থাকে ; তাহার প্রধান কারণ এই যে, ধীবরের ন্যায় আমাদের মন ঐক্যজলি ফেলিয়া একেবারে এক ক্ষেপে যতখানি ধরিতে পারে, সেইটুকু গ্রহণ করে, বাকি সমস্তই তাহাকে এড়াইয়া যায়। যে যখন দেখে তখন ভালো করিয়া শোনে না ; যখন শোনে তখন ভালো করিয়া দেখে না, এবং সে যখন চিন্তা করে তখন ভালো করিয়া দেখেও না, শোনেও না । তাহার উদ্দেশ্যের পথ হইতে সমস্ত অনাবশ্যক পদার্থকে সে অনেকটা পরিমাণে দূর করিয়া দিতে পারে। এই ক্ষমতাবলেই সে এই জগতের অসীম বৈচিত্র্যের মধ্যেও আপনার নিকটে আপনার প্রাধান্ত রক্ষা করিতে পারিয়াছে। পুরাণে