পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> ネ লোকসাহিত্য দেখাইতে পারিব না। আলোচলের প্রলোভন একটা মস্ত কারণ হইতে পারে, কিন্তু সেই কারণ আমাদিগকে সীতারামের আকস্মিক নৃত্য হইতে ভুলাইয়া হঠাৎ ত্রিপূর্ণির ঘাটে আনিয়া উপস্থিত করিল। সেই ঘাটে দুটি মৎস্ত ভাসিয়া উঠা কিছুই আশ্চর্য নহে বটে, কিন্তু বিশেষ আশ্চর্যের বিষয় এই যে, দুটি মৎস্তের মধ্যে একটি মৎস্য যে লোক লইয়া গেছে তাহার কোনোরূপ উদেশ না পাওয়া সত্বেও আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রচয়িতা কী কারণে তাহারই ভগিনীকে বিবাহ করিবার জন্য হঠাৎ স্থির সংকল্প হইয়া বসিলেন, অথচ প্রচলিত বিবাহের প্রথা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়া একমাত্র ওড়ফুল সংগ্রহদ্বারাই শুভকর্মের আয়োজন যথেষ্ট বিবেচনা করিলেন এবং যে লগ্নটি স্থির করিলেন তাহাও নূতন অথবা পুরাতন কোনো পঞ্জিকাকারের মতেই প্রশস্ত নহে। এই তো কবিতার বাধুনি। আমাদের হাতে যদি রচনার ভার থাকিত তবে নিশ্চয় এমন কৌশলে প্লট বাধিতাম যাহাতে প্রথমোক্ত যমুনাবতীই গ্রন্থের শেষ পরিচ্ছেদে সেই ত্রিপূর্ণির ঘাটের অনির্দিষ্ট ব্যক্তির অপরিজ্ঞাত ভগ্নীরূপে দাড়াইয়া যাইত এবং ঠিক মধ্যাহ্নকালে ওড়ফুলের মালা-বদল করিয়া যে গান্ধৰ্ব বিবাহ ঘটিত তাহাতে সহৃদয় পাঠকমাত্রেই তৃপ্তিলাভ করিতেন । কিন্তু বালকের প্রকৃতিতে মনের প্রতাপ অনেকটা ক্ষীণ । জগৎ-সংসার এবং তাহার নিজের কল্পনাগুলি তাহাকে বিচ্ছিন্নভাবে আঘাত করে ; একটার পর আর-একটা আসিয়া উপস্থিত হয়। মনের বন্ধন তাহার পক্ষে পীড়াজমক । সুসংলগ্ন কার্যকারণস্বত্র ধরিয়া জিনিসকে প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত অনুসরণ করা তাহার পক্ষে দুঃসাধ্য। বহির্জগতে সমুদ্রতীরে বসিয়া বালক বালির ঘর রচনা করে, মানস-জগতের সিন্ধুতীরেও সে আনন্দে বসিয়া বালির ঘর বাধিতে থাকে। বালিতে বালিতে জোড়া লাগে না, তাহা স্থায়ী হয় না— কিন্তু বালুকণর মধ্যে এই যোজনশীলতার অভাব-বশতই বাল্যস্থাপত্যের পক্ষে তাহ৷ সর্বোৎকৃষ্ট উপকরণ । মুহূর্তের মধ্যেই মুঠা মুঠা করিয়া তাহাকে একটা উচ্চ আকারে