পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছেলেভুলানো ছড়া רכא নিয়ে ছন্দ পূরণ করিয়া দিলাম— 鹹 বোন কাদেন বোন কাদেন খাটের খুরো ধরে সেই-যে বোন গাল দিয়েছেন স্বামীখাকী বলে । ম। অলংকার দিয়াছেন, বাপ অৰ্থ দিয়াছেন, মাসি ভাত খাওয়াইয়াছেন, পিসি দুধ খাওয়াইয়াছেন, ভাই কাপড় কিনিয়া দিয়াছেন— আশা করিয়াছিলাম এমন স্নেহের পরিবারে ভগিনীও অনুরূপ কোনো প্রিয়কাৰ্য করিয়া থাকিবেন । কিন্তু হঠাৎ শেষ ছত্রটা পড়িয়াই বক্ষে একটা আঘাত লাগে এবং চক্ষুও ছলছল করিয়া উঠে। মা-বাপের পূর্বতন স্নেহব্যবহারের সহিত বিদায়কালীন রোদনের একটা সামঞ্জস্ত আছে– তাহ প্রত্যাশিত। কিন্তু যে ভগিনী সর্বদা ঝগড়া করিত এবং অকথ্য গালি দিত, বিদায়কালে তাহার কান্না যেন সব চেয়ে সকরুণ ৷ হঠাৎ আজ বাহির হইয়া পড়িল যে, তাহার সমস্ত দ্বন্দ্বকলহের মাঝখানে একটি সুকোমল স্নেহ গোপনে সঞ্চিত হইতেছিল —সেই অলক্ষিত স্নেহ সহসা সুতীব্র অনুশোচনার সহিত আজ তাহাকে বড়ে কঠিন আঘাত করিল। সে খাটের খুৱা ধরিয়া কাদিতে লাগিল । বাল্যকালে এই এক খাটে তাহারা দুই ভগিনী শয়ন করিত, এই শয়নগৃহই তাহাদের সমস্ত কলহবিবাদ এবং সমস্ত খেলাধুলার লীলাক্ষেত্র ছিল। বিচ্ছেদের দিনে এই শয়ন-ঘরে আসিয়া, এই খাটের খুরা ধরিয়া, নির্জনে গোপনে দাড়াইয়া, ব্যথিত বালিকা যে ব্যাকুল অশ্রপাত করিয়াছিল, সেই গভীর স্নেহ-উৎসের নির্মল জলধারায় কলহভাষার সমস্ত কলঙ্ক প্রক্ষালিত হইয়। শুভ্ৰ হইয়া গিয়াছে। এই-সমস্ত ছড়ার মধ্যে একটি ছত্রে, একটি কথায়, স্থখদু:খের এক-একটি বড়ো বড়ো অধ্যায় উহ রহিয়া গিয়াছে। নিম্নে ষে ছড়াটি উদ্ভূত করিতেছি তাহার দুই ছত্রে আদ্যকাল হইতে অন্তকাল পর্যন্ত বঙ্গীয় জননীর কত দিনের শোকের ইতিহাস ব্যক্ত হইয়াছে—