পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছেলেভুলানো ছড়া 8 ግ মুখে সেই দেবদুর্লভ অমৃতরসের সন্ধান প্রাপ্ত হইয়াছেন, তাই তাহার অস্তরের উপাসনামন্দির হইতে এই গাথা উচ্ছসিত হইয়া উঠিয়াছে— ধনকে নিয়ে বনকে যাব, সেখানে খাব কী । নিরলে বসিয়া চাদের মুখ নিরথি । সেইজন্য ছড়ার মধ্যে প্রায়ই দেখিতে পাওয়া যায়— নিজের পুত্রের সহিত দেবকীর পুত্রকে অনেক স্থলেই মিশাইয়া ফেলা হইয়াছে। অন্ত দেশে মনুষ্যে দেবতায় এরূপ মিলাইয়া দেওয়া দেবাপমান বলিয়া গণ্য হইত। কিন্তু আমার বিবেচনায় মহন্তের উচ্চতম মধুরতম গভীরতম জীবন্ত সম্বন্ধ-সকল হইতে দেবতাকে স্থদুরে স্বতন্ত্র করিয়া রাখিলে মনুষ্যত্বকেও অপমান করা হয়, এবং দেবত্বকেও আদর করা হয় না। অামাদের ছড়ার মধ্যে মর্তের শিশু স্বর্গের দেবপ্রতিমার সঙ্গে যখন-তখন এক হইয়া গিয়াছে— সেও অতি সহজে, অতি অবহেলে— তাহার জন্য স্বতন্ত্র চালচিত্রেরও অবিশু্যক হইতেছে না। শিশু-দেবতার অতি অদ্ভূত অসংগত অর্থহীন চালচিত্রের মধ্যেই স্বগের দেবতা কখন অলক্ষিতে শিশুর সহিত মিশিয়। আপনি আসিয়া দাড়াইতেছেন । খোকা যাবে বেডু করতে তেলিমাগীদের পাড়া । তেলিমাগীরা মুখ করেছে কেন রে মাখনচোরা ॥ ভাড় ভেঙেছে, ননি খেয়েছে আর কি দেখা পাব । কদমতলায় দেখা পেলে বাশি কেড়ে নেব । হঠাৎ, তেলিমাগীদের পাড়ায় ক্ষুদ্র খোকাবাবু কখন যে বৃন্দাবনের বঁাশি অনিয়া ফেলিয়াছেন তাহা সে বঁাশি যাহাদের কানের ভিতর দিয়া মরমে প্রবেশ করিয়াছে তাহারাই বুঝিতে পরিবে । আমি ছড়াকে মেঘের সহিত তুলনা করিয়াছি। উভয়েই পরিবর্তনশীল, বিবিধ বর্ণে রঞ্জিত, বায়ুস্রোতে যদৃচ্ছাভাসমান। দেখিয়া মনে হয় নিরর্থক ।