পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

82 ছেলেভুলানো ছড়া : ২ ভূমিকা আমাদের অলংকারশাস্ত্রে নয় রসের উল্লেখ আছে, কিন্তু ছেলেভুলানো ছড়ার মধ্যে যে রসটি পাওয়া যায়, তাহা শাস্ত্রোক্ত কোনো রসের অন্তর্গত নহে । সদ্যঃকর্ষণে মাটি হইতে যে সৌরভটি বাহির হয়, অথবা শিশুর নবনীতকোমল দেহের যে স্নেহোদবেলকর গন্ধ, তাহাকে পুষ্পচন্দন গোলাপজল আতর বা ধূপের স্বগন্ধের সহিত এক শ্রেণীতে ভুক্ত করা যায় না। সমস্ত স্বগন্ধের অপেক্ষ তাহার মধ্যে যেমন একটি অপূর্ব আদিমতা আছে, ছেলেভুলানো ছড়ার মধ্যে তেমনি একটি আদিম সৌকুমাৰ্য আছে ; সেই মাধুর্যটিকে বাল্যরস নাম দেওয়া যাইতে পারে। তাহা তীব্র নহে, গাঢ় নহে, তাহ অত্যন্ত স্নিগ্ধ সরস এব যুক্তিসংগতিহীন । শুদ্ধমাত্র এই রসের দ্বারা আকৃষ্ট হইয়াই অামি বাংলাদেশের ছড়া সংগ্রহে প্রবৃত্ত হইয়াছিলাম। রুচিভেদবশত সে রস সকলের প্রতিকর না হইতে পারে, কিন্তু এই ছড়াগুলি স্থায়ীভাবে সংগ্ৰহ করিয়া রাখা কর্তব্য সে বিষয়ে বোধ করি কণহারে মতান্তর হইতে পারে না। কারণ, ইহা অামাদের জাতীয় সম্পত্তি। বহুকাল হইতে আমাদের দেশের মাতৃতাগুরে এই ছড়াগুলি রক্ষিত হইয়া আসিয়াছে ; এই ছড়ার মধ্যে আমাদের মাতৃমাতামহীগণের স্নেহসংগীতস্বর জড়িত হইয়া আছে, এই ছড়ার ছন্দে আমাদের পিতৃপিতামহগণের শৈশবনৃত্যের নূপুরনিক্কণ ঝংকৃত হইতেছে। অথচ, আজকাল এই ছড়াগুলি লোকে ক্রমশই বিস্তৃত হইয়া যাইতেছে। সামাজিক পরিবর্তনের স্রোতে ছোটো বড়ে অনেক জিনিস অলক্ষিতভাবে ভাসিয়া যাইতেছে । অতএব জাতীয় পুরাতন সম্পত্তি সযত্বে সংগ্ৰহ করিয়া রাখিবার উপযুক্ত সময় উপস্থিত হইয়াছে। 8