পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কবি-সংগীত ግእU এবং সম্মিলিত কণ্ঠের প্রাণপণ চীৎকার ; বিজনবিলাসিনী সরস্বতী এমন সভায় অধিকক্ষণ টিকিতে পারেন না। o: সৌন্দর্ধের সরলতায় যাহাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না, ভাবের গভীরতায় যাহাদের নিমগ্ন হইবার অবসর নাই, ঘন ঘন অনুপ্রাসে অতি শীঘ্রই তাহদের মনকে উত্তেজিত করিয়া দেয়। সংগীত যখন বর্বর অবস্থায় থাকে তখন তাহাতে রাগরাগিণীর যতই অভাব থাকৃ, তালপ্রয়োগের খচমচ কোলাহল যথেষ্ট থাকে। সুরের অপেক্ষা সেই ঘন ঘন সশবদ আঘাতে অশিক্ষিত চিত্ত সহজে মাতিয়া উঠে। এক শ্রেণীর কবিতায় অনুপ্রাস সেইরূপ ক্ষণিক, ত্বরিত, সহজ উত্তেজনার উদ্রেক করে। সাধারণ লোকের কর্ণ অতি শীঘ্র আকর্ষণ করিবার এমন স্থলভ উপায় অল্পই আছে। অনুপ্রাস যখন ভাব ভাষা ও ছন্দের অনুগামী হয় তখন তাহাতে কাব্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে কিন্তু সে সকলকে ছাড়াইয়া ছাপাইয়া উঠিয়া যখন মূঢ় লোকের বাহবা লইবার জন্য অগ্রসর হয় তখন তদ্বারা সমস্ত কবিতা ইতরতা প্রাপ্ত হয়। কবিদলের গানে অনেক স্থলে অনুপ্রাস— ভাব, ভাষা, এমন-কি ব্যাকরণকে ঠেলিয়া ফেলিয়া শ্রোতাদের নিকট প্ৰগলভতা প্রকাশ করিতে অগ্রসর হয় । অথচ তাহার যথার্থ কোনো নৈপুণ্য নাই, কারণ তাহাকে ছন্দোবন্ধ অথবা কোনো নিয়ম রক্ষা করিয়াই চলিতে হয় না। কিন্তু ষে শ্রোতা কেবল ক্ষণিক আমোদে মাতিয়া উঠিতে চাহে সে এত বিচার করে না ; এবং যাহাতে বিচার আবশ্যক এমন জিনিসও চাহে না । গেল গেল কুল কুল, যাক কুল— তাহে মই আকুল । © লয়েছি যাহার কুল, সে আমার প্রতিকূল । যদি কুলকুগুলিনী অমুকুলা হন আমায় অকুলের তরী কুল পাব পুনরায়