পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*求 লোকসাহিত্য হইয়াছে ; তথাপি সমগ্র পাঠের পর যাহার মনে একটা সুন্দর এবং উন্নত ভাবের স্বষ্টি না হয়, সে হয় সমস্তটা ভালো করিয়া পড়ে নাই নয় সে যথার্থ কাব্যরসের রসিক নহে । কিন্তু আমাদের কবিওয়ালারা বৈষ্ণব কাব্যের সৌন্দর্য এবং গভীরতা নিজেদের এবং শ্রোতাদের আয়ত্তের অতীত জানিয়া প্রধানত যে অংশ নির্বাচিত করিয়া লইয়াছেন তাহা অতি অযোগ্য। কলঙ্ক এবং ছলনা ইহাই কবিওয়ালাদের গানের প্রধান বিষয়। বারংবার রাধিক এবং রাধিকার সখীগণ কুজাকে অথবা অপরাকে লক্ষ্য করিয়া তীব্র সরস পরিহাসে শু্যামকে গঞ্জনা করিতেছেন । র্তাহাদের আরো একটি রচনার বিষয় আছে, স্ত্রী-পক্ষ এবং পুরুষ-পক্ষের পরম্পরের প্রতি অবিশ্বাস-প্রকাশ-পূর্বক দোষারোপ করা ; সেই শখের কলহ শুনিতে শুনিতে ধিক্কার জন্মে। যাহাদের প্রকৃত আত্মসন্মানজ্ঞান দৃঢ় তাহারা সর্বদা অভিমান প্রকাশ করিতে অবজ্ঞা করিয়া থাকে। তাহীদের মানে আঘাত লাগিলে, হয় তাহারা স্পষ্টরূপে তাহার প্রতিকার করে নয় তাহা নিঃশব্দে উপেক্ষা করিয়া যায়। প্রিয়জনদের নিকট হইতে প্রেমে আঘাত লাগিলে, হয় তাহ গোপনে বহন করে নয় সাক্ষাতভাবে সম্পূর্ণরূপে তাহার মীমাংসা করিয়া লয়। আমাদের দেশে ইহা সর্বদাই দেখিতে পাওয়া যায় পরাধীনতা যাহার অবলম্বন সেই অভিমানী ; যে এক দিকে ভিক্ষুক তাহার অপর দিকে অভিমানের অস্ত নাই, যে সর্ববিষয়ে অক্ষম সে কথায় কথায় অভিমান প্রকাশ করিয়া থাকে। এই অভিমান জিনিসটি বাঙালি-প্রকৃতির মজ্জাগত নির্লজ্জ দুর্বলতার পরিচায়ক । দুর্বলতা স্থলবিশেষে এবং পরিমাণবিশেষে সুন্দর লাগে। স্বল্প উপলক্ষে অভিমান কখনো কখনো স্ত্রীলোকদিগকে শোভা পায়। যতক্ষণ নায়কের প্রেমের প্রতি নায়িকার যথার্থ দাবি থাকে ততক্ষণ মাঝে মাঝে ক্রীড়াচ্ছলে