পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রাম্যসাহিত্য bూసా তবুও একটা ছন্দ এবং একটা স্থর চাই। এই জগৎপ্রান্তে এই পাবন। জিলার বিলের ধারেও তাহার প্রয়োজন আছে । তাহাতে করিয়া ঐ মোটরির দশম এক টাকার চেয়ে অনেকট বাড়িয়া যায়। ঐ মোটরিটাকে রসের এবং ভাবের পরশপাথর ছোওয়াইয়া দেওয়া হয়। গানের সেই দুটে লাইনকে প্রচলিত গদ্যে বিনা স্বরে বলিলে তাহার মধ্যে যে-একটি রূঢ় দৈন্য আসিয় পড়ে, ছন্দে স্বরে তাহ। নিমেষের মধ্যে ঘুচিয়া যায় ; সংসারের প্রতিদিনের ধূলিম্পর্শ হইতে ঐ ক’টি তুচ্ছ কথা ভাবের আবরণে আবৃত হইয়া উঠে । মানুষের পক্ষে ইহার একটা একান্ত প্রয়োজন আছে। যে-সকল সাংসারিক ব্যাপারের দ্বারা সে সর্বদা ঘনিষ্ঠভাবে পরিবৃত তাহাকে সে ছন্দে লয়ে মণ্ডিত করিয়া তাহার উপর নিত্যসৌন্দর্যময় ভাবের রশ্মিপাত করিয়া দেখিতে চায়। সেইজন্য জনপদে যেমন চাষবাস এবং খেয়া চলিতেছে— সেখানে কামারের ঘরে লাঙলের ফলা, ছুতারের ঘরে ঢে*কি এবং স্বর্ণকারের ঘরে টাকাদামের মোটরি নির্মাণ হইতেছে — তেমনি সঙ্গে সঙ্গে ভিতরে ভিতরে একটা সাহিত্যের গঠনকার্যও চলিতেছে ; তাহার বিশ্রাম নাই। প্রতিদিন যাহা বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন খণ্ড খণ্ড ভাবে সম্পন্ন হইতেছে সাহিত্য তাহাকে ঐক্যস্থত্রে গাঁথিয়া নিত্যকালের জন্য প্রস্তুত করিতে চেষ্টা করিতেছে। গ্রামের মধ্যে প্রতিদিনের বিচিত্র কাজও চলিতেছে এবং তাহার ছিদ্রে ছিদ্রে চিরদিনের একটা রাগিণী বাজিয়া উঠিবার জন্য নিয়ত প্রয়াস পাইতেছে। পদ্মা বাহিয়া চলিতে চলিতে বালুচরের মধ্যে যখন চকাচকীর কলরব শুনা যায় তখন তাহাকে কোকিলের কুহুতান বলিয়া কাহারে ভ্রম হয় না, তাহাতে পঞ্চম মধ্যম কড়িকোমল কোনোপ্রকার স্থর ঠিকমত লাগে না ইহা নিশ্চয়, কিন্তু তবু ইহাকে পদ্মাচরের গান বলিলে কিছুই অসংগত হয় না। কারণ, ইহাতে স্বর বেস্থর যাহাই লাগুক, সেই নির্মল নদীর হাওয়ায় শীতের রৌদ্রে অসংখ্য প্রাণীর জীবনমুখসম্ভোগের আনন্দধ্বনি বাজিয় উঠে।